সুশিক্ষা

Comments · 2 Views

সন্তানকে শুধু লেখা পড়া শিখালেই হয় না।
তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও করতে হয়

প্রত্যেক বাবা মায়ের যা করনীয়:

 

অর্থবিত্ত হওয়া সত্ত্বেও আমি আমার একমাত্র ছেলেকে কখনো দশ টাকার বেশি টিফিন খরচ দেইনি।

সে বরাবরই তার বন্ধুদের দেখিয়ে বলে বাবা দেখো আজ সে কতো ব্রাণ্ডেড ঘড়িটা পরে এসেছে। বাবা দেখো তার স্কুল ব্যাগটা ইম্পোর্টেট! সুন্দর না বাবা!! 

 

আমি মাথা নাড়িয়ে শুধু সম্মতি জানাই,

আমার ছেলের সাহস কিন্তু হয়নি কখনো সেম জিনিসটা চাওয়ার।

একদিন তার পায়ে সামান্য ব্যথা। স্কুল যাওয়ার সময় বললো বাবা আমাকে তোমার সাথে অফিসের গাড়িতে নিয়ে স্কুলে নামিয়ে দেবে?? 

 

আমি তার সমস্যার কথা বিবেচনা করে বললাম ঠিক আছে।

এরপর প্রায় এক সপ্তাহ সে আমার সাথেই গেলো। আমি চুপচাপ তাকে নামিয়ে দিতাম। আমার ছেলের এখন দেখছি হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছেনা।

পরেরদিন সকালে আমাকে বলার আগে আমিই বলে দিলাম অফিসিয়াল জিনিস ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিষিদ্ধ। বাড়ি থেকে স্কুল দশ মিনিটের পথ নির্দিষ্ট সময়ের আরোও কিছুক্ষণ আগে বের হবে হেঁটে যেতে পারবে।। 

 

ছেলে আমার প্রচন্ড মন খারাপ করে বসে রইলো।

এদিকে আমার স্ত্রীও মন খারাপ করেছে। কেনো করি এমন! এর উত্তর জানা নেই।

আজ সন্ধ্যায় ছেলে আমার বাড়িতে এসেই বলেছে জানো আমার বন্ধু শহরের সবচেয়ে সেরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমিও ………

বলার আগেই আমি তাকে থামিয়ে জানতে চাইলাম বাবা প্রতিষ্ঠান সেরা হয় নাকি ছাত্র??

ধরো আমি তোমায় সে স্কুলে দিলাম কিন্তু তুমি ফেল করলে কোনো সাবজেক্টে তাহলে আমি কি বলবো তুমি ফেল নাকি স্কুল?? 

ছেলে বললো বুঝেছি বাবা।

আমি তার মাথায় হাত দিয়ে বললাম এই পর্যন্ত তোমার ক্লাসের কোনো ছেলেই তোমাকে টপকে যেতে পারেনি। তুমিই ফার্স্ট বয়।।

 সুতরাং তুমি যেখানে সেরাটা দেবে সেই স্থানই সেরা তোমার মতো। 

 

এরপর সে আর এরকম কোনো কথা বলেনি।।

আজ বিকেলে ছেলে বলছে বাবা একজন এক্সট্রা টিউটর দরকার। আমার ম্যাথ ইংলিশে একটু সমস্যা হচ্ছে।

 আমি ছেলেকে বললাম বাবা একটু কষ্ট করতে হবে। আমি যখন রাত করে বাড়িতে ফিরবো ন'টা কিংবা দশটায় আমার কাছেই তোমাকে ম্যাথ আর ইংলিশ করতে হবে।

বাবা তুমি পরিশ্রম করে বাড়ি আসো তাই না?? 

আমি হেসে বললাম, না বাবা। আমার কাছে এতো সামর্থ্য নেই তোমাকে এক্সট্রা টিউটর দেওয়ার। আমি বরং একটু কষ্ট করি। কি বলো??

ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো ঠিক আছে বাবা।

 

স্ত্রী রাতেরবেলা জিজ্ঞেস করলেন তুমি এরকম দশটা টিউটর রাখতে পারো কিন্তু! ! 

কিন্তু আমি চাই আমার সন্তান বুঝুক আরাম করে কিছু পাওয়া যায় না। মানুষের জীবনে অভাব আসলে তা কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় সে বুঝুক ও সে শিখুক। কোনো কিছুই মন্দ নয় সে বুঝুক।।

 

আমার স্ত্রী চুপ হয়ে গেলেন। 

মাঝেমাঝে আমার ছেলেকে নিয়ে আমি ফুটপাতে হাঁটি। পথশিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষের সম্পর্কে জানাই। সে জানুক পৃথিবী শুধু চিন্তায় সুন্দর। বাস্তবে খুব কঠিন। 

আমি চাওয়া মাত্রই তাকে কিছু দেইনি। একদিন সে বলেছিলো বাবা তুমি এরকম কেনো?? 

তাকে বলেছিলাম সময় হলে বুঝবে।।

 

দুই তিন আগে সে ইলিশ ও মাংস পোলাও খাবে।

তাকে বললাম টাকাতো কম। তোমার কাছে কিছু আছে?

থাকলে ইলিশ আনা যাবে। ছেলে আমার পঞ্চাশটি দশ টাকার নোট বের করে দিল। আমি অবাক হয়ে বললাম তুমি খরচ করোনি?? 

সে মুচকি হাসি দিয়ে বললো, না বাবা। জমিয়েছি।

 আমার পরিচিত এক বন্ধু স্কুলে না খেয়েই আসে। কোনো টাকাও নেই তার কাছে। আসলে সে খুব অসহায় বাবা।

 আমি মাঝে তাকে ক্ষুধার্ত দেখে বুঝতে পারি সেদিনই তার সাথে খাই কারন তখন সে না করে না। অন্যান্য দিনগুলো টাকা খরচ করিনা।

জমিয়ে রাখি কারন বাড়ি থেকে মা যা দেয় তাতো যথেষ্ট কারন কিছু মানুষ সামান্যটুকুও পায় না।।

 

আমি ছেলের দিকে তাকিয়ে আছি।

সেই গুছানো টাকা নিয়ে আরোও টাকা মিলিয়ে ইলিশ এনে ছেলেকে ইলিশ মাংস পোলাও খাওয়ালাম।

ইচ্ছে করেই অভাব অনুভব করাই যাতে সে বুঝুক জীবনটা কঠিন। অনেক কঠিন। 

পূজোর বাজারে গিয়ে তাকে বলেছি সাধ্যের মধ্যে নিতে, সে একটা প্যান্ট নিয়েছে শুধু।। 

জানতে চাইলে বলে তোমার জন্য পাঞ্জাবি আর মায়ের জন্য শাড়ি নিয়েছি।।

আমি হাসলাম। 

সে বুঝতে শিখেছে টাকা কিভাবে খরচ করতে হয়।।

 

একদিন বসে বসে বলছে বাবা সায়নটা আর মানুষ হলো না অথচ আংকেল তার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন।

 যা চেয়েছে সে, তার সবটাই তাকে দিয়েছেন।

আমি ছেলেকে বললাম আমি কি তোমাকে কিছু দিতে পারিনি?? 

ছেলে আমার কোলে মাথা রেখে বললো প্রতিটা চাহিদা পূরন করে শিখিয়েছ অভাবে যেন স্বভাব নষ্ট না হয়।

  তুমি জীবনের যে শিক্ষা দিয়েছ বাবা তা সব কিছুর উর্ধে। তুমি শিখিয়েছ অভাবকে কিভাবে ভালবাসতে হয়।

আমি এখনো জানি আমার বাবার আমি ছাড়া কিছু নাই। বাকীটা আমাকে করে নিতে হবে। সবকিছু ইউটিলাইজ করতে হবে।

আমি সাধারণ জামাকাপড়েও হীনমন্যতায় ভুগি না বাবা। কারন আমি জানি আমি কে!! 

 

তোমার দেয়া শিক্ষা আমি সারাজীবন ধরে রাখবো বাবা।

 চাওয়া মাত্রই পেয়ে গেলে আমি কখনো জানতামই না পঞ্চাশ দিন না খেয়ে টিফিন মানি জমালে পাঁচশো টাকা জমা হয়। তুমি আছো বলেই সম্ভব।

আমি মানুষকে মানুষের চোখে দেখি। আমি বুঝি জীবন কতো কঠিন। 

আমার স্ত্রী নিজের থেকেই আজ খুব খুশি, বুঝতে পেরেছেন আমার উদ্দেশ্যটা।। 

 

প্রায় দশ বছর পর ছেলে প্রাইভেট কার কিনেছে নিজের রোজগারে।

হাসতে হাসতে বলে বিগত পাঁচ বছরে টিফিনের টাকা আর বোনাসের টাকা জমিয়ে এটা কিনেছি।।

বুঝতে পেরেছিলাম ছেলে আমার সঞ্চয়ী হয়েছে, সাথে হয়েছে মানুষও।।

 

সপ্তাহখানিক পর যাবতীয় সম্পত্তি তার নামে লিখে দিয়ে বললাম সামলে রেখো।

ছেলে দলিল আমার হাতে দিয়ে বললো তোমরা সাথে থেকো। আর কিছু লাগবে না।। 

 

আজ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার স্ত্রী নীলিমাকে বললাম দেখেছো আমি ভুল করিনি।।

 আমি আমার সন্তানকে মানুষ করতে গিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটাই দিয়েছি যেমনটা আমার বাবা দিয়েছিলেন আমাকে।

আমি অভাবে সন্তানকে লজ্জিত হওয়া নয় বরং দৃঢ় থাকতে শিখিয়েছি।।

Comments
Read more