স্ত্রীর হঠাৎ প্রস"ব বেদনা উঠলো,ডেলিভারি হবে।পকেটে শুধু এক হাজার টাকা!লজ্জা ভুলে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা চাইলাম।
একেকজন একেক বাহানা দিয়ে এড়িয়ে গেলো।কেউ কেউ উল্টো কথা শুনালো
" জানো না ঘরে পোয়াতি বউ?টাকার জোগাড় করে রাখতে হব জানোই তো "
বললাম " ওর ডেট আরো দেড় মাস পর।হঠাৎ এখন ব্যথা উঠবে কে জানতো!"
আমার অবস্থা দেখে মুদি দোকানদার পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বললো " এম্বুলেন্স আমার এক পরিচিতর আছে।কল দিছি,এক্ষুনি চলে আসবে।আর এই টাকাটা রাখেন "
দোকানীর হাত ধরে বললাম " ভাই,কি যে উপকার করলেন!কতজনের কাছে ধার চাইলাম।কেউ দেয়নি,আজ আপন মানুষ চিনলাম "
" ভাই এখন এসব ভাবিয়েন না।আমার নাম্বার তো আছে,আরো লাগলে কল দিয়েন।পাঠিয়ে দিবো "
সেই রাতে ফুটফুটে একটা মেয়ে সন্তান হলো।কাজের বুয়াও এসছে স্ত্রীর সাথে।উনি আমার কাছে এসে হেসে বললেন " ভাইজান,রাজকন্যার মতো মেয়ে হইছে।আহা,কি সুন্দর!মনডা ভরে গেছে "
কথাটা বলে উনি আঁচল থেকে টাকা বেড় করে আমার হাতে দিয়ে বললেন " ভাইজান,এই টেহা টা দিয়া মিষ্টি আনেন।হাসপাতালের সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান "
দেখলাম এক হাজার টাকার নোট! বললাম " এতো টাকা!তুমি টাকাটা রাখো।আমার কাছে টাকা আছে "
" ভাইজান এইটা খুশী হইয়া দিছি।মাইয়াডাকে খুব মনে ধরছে।ফুটফুটে বাচ্চা,এত সুন্দর বাচ্চা কখনো দেহি নাই "
বুয়ার টাকার মিষ্টি হসপিটালের সবাইকে খাওয়ালাম।পরেরদিন বাড়িতে আসলাম ফ্লাস্ক,কাঁথা আর প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়ার জন্য।নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার রাস্তায় দেখলাম ছোট কাকুর হাতে বিরাট এক রুই মাছ।বাজার থেকে বাড়ি ফিরছেন।অথচ গতরাতে কাকুর কাছে টাকা চাইলে বলেছিলেন
" বাবা এখন তো টাকা নাই।হাত একদম খালি,তুমি ব্যবস্থা করো, আমি কাল সকালে তোমায় টাকা পাঠাবো! "
খুব কান্না পেয়ে গেলো।যাদের আপন ভাবতাম তারা আমায় কিছুই ভাবেন না!মেয়েকে হসপিটালে দেখতে পর্যন্ত গেলো না।অথচ এলাকার মুদি দোকানী টাকা দিলো।কাজের বুয়া নিজের টাকা দিয়ে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালো!
আফসোস!দুঃসময়ে পাশে থাকা এই লোকগুলোকেই কখনো আপন ভাবিনি! ভুল ভাঙলো।