হিম:-খেয়েছিস ? পাখি:-না । -কেন , তুই না খেলে কি চালের দাম কমে যাবে ?
খিলখিল করে হেসে উঠলো পাখি আমি চুপ করে ওর হাসি শুনতে লাগলাম মোবাইলটা ভালো করে কানে লাগিয়ে ।
মেয়েটা হাসলে অনেকক্ষণ সেটার রেশ ছড়িয়ে থাকে । খুব ভালো লাগে ।
যেন হারিয়ে যাই আমি । -এই হিম , তুই চুপ কেন ? -তোর হাসি শুনছিলাম -কেন , আমার হাসিতে কি? -জানি না ।
-ও , না জানলে কি আর করা ! ঘুমা যা । -তোর শরীর এখন কেমন ? ওষুধ খাচ্ছিস ঠিকমত ? আমাকে তো কিছু জানাসনা ।
-হুম খাই তো । -ট্রিটমেন্টের জন্য কবে যাবি সিঙ্গাপুর? -জানিনা ।
আব্বুকে জিজ্ঞাস করলে বলে সময় মত জানতে পারবে । ডাক্তারের কাছ থেকে আসার পর আব্বু মুখ কালো করে থাকে ।
আমার কি হয়েছে তা বলেনা । আমি মনে হয় বাঁচবোনা রে । -আমি রাখি । বাই । -রাখিস না , শোন... আমি লাইন কেটে দিলাম ।
মেয়েটা মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে । একটু পর একটা মেসেজ । সরি লেখা ।
রাগ এখনে কমেনি আমার উপর থেকে ৷ কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে ক্লাস করছি । হঠাৎ পাখির ফোন, ধরলাম না ।
এরপর টেক্সট মেসেজ : "আমার ফ্লাইট আগামীকাল ।
দেখা করতে পারবি ?" আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো । ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র কল দিলাম। "আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এখন বন্ধ আছে..." কানের কাছে বাজতেই থাকলো কন্ঠটা । রাতেকল দিলাম ।
ধরলো সে । গম্ভীর গলা । কেঁদেছে বোঝা যায় । -কাল কখন যাবি ? -দুপুরে । -সব গোছগাছ ? -হুম। -রাগ আমার উপর ? -না । কিছুক্ষণ চুপচাপ দুজন ।
-হিম ? -হুম । -আমাকে ভালোবাসিস ? -বাসি তো , কেন তুই বুঝিসনা ? -তাহলে কেন আসলি না ? -আমার ক্লাস ছিল , তাই আসতে পারিনি ।
সরি । -আমি যদি আর ফিরে না আসি ? যদি আর দেখা না হয় ? -উফ , তুই আবার শুরু করলি ? -আচ্ছা যা , বন্ধ করলাম ।
তোর জন্য কি আনব বল ? -তোকে নিয়ে আসলেই হলো। -হুম , আনব । দুজন চুপ, রাত বেড়ে যায় ।
- তোর তো নীল রংয়ের টি শার্ট পছন্দ , তাই না ? -হুম , নীল রংয়ের । -সকালে ফোন দিতে পারবি ? -পারব ।
-ঠিক আছে । এখন ঘুমা । আমিও ঘুমাব । -গুড নাইট । -হুম । পরদিন সকাল থেকে পাখির মোবাইল আর খোলা পাইনা আমি
। ওর বাসার কাছের এক বান্ধবীকে কল দিয়ে জানতে পারলাম যে পাখি সিঙ্গাপুর চলে গেছে ।
অদ্ভূত মেয়ে ! আমাকে ফেসবুকেও একটা মেসেজ দিলোনা , ওখান থেকে একটা কলও দিলোনা, স্বভাবই এরকম । কয়েকমাস কেটে যাওয়ার পর , আমার কাছে ফোন এলো : -হিম ।
-তুই এমন কেন পাখি? এগুলো কি ? আমাকে একটা খবরও দিতে পারিসনা তুই ? এমন করিস কেন আমার সাথে ?
-হিম , আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে । প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম আমি ! আমার মুখ থেকে কথা বের হলোনা -হিম , তোর জন্য আমি আমার আমিকে আনতে পারলাম না ।
মাফ করে দিস । আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। পাখি হারিয়ে যাচ্ছে আমার জীবন থেকে । আমি অসহায় । -
তোকে আমি দেখতে চাই,পাখি ফোনের ওপাশ থেকে ফোঁপানোর আওয়াজ শুনতে পেলাম । সে লাইন কেটে দিলো । ডাক্তার রা আর কিছুই করতে পারেনি ।
অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। অপারেশন আর সম্ভব ছিলোনা । পাখির লাশ সিঙ্গাপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।পাখির সাথে আমার এ জীবনে আর কখনোই দেখা হবেনা ।
একদিন দুপুর একটা পার্সেল আসলো আমার নামে । প্যাকেট খুলে পেলাম একট নীল টি শার্ট , পোলো ব্র্যান্ডের সাথে একটা লাভ আর একটা চিঠি : " হিম , আমি বাঁচবোনা তা তোকে আগেই বলে গিয়েছিলাম ।
তোকে ছেড়ে চলে যাব ভেবে মন খারাপ করিসনা । আমি খুব দুর্বল মেয়ে তুই জানিস । আমার নিজেকে যে কিভাবে আমি ধরে রেখেছি , তা তোকে বোঝাতে পারবনা ।
আমি থাকব তোর পাশে, তোর হাতে হাত রেখে ছায়া নীলে থাকব তোর বৃষ্টির সন্ধ্যায় । আমার জন্য একটু একটু ভালোবাসা জমা রাখিস ।
আমি আজ নেই তবু কত সুর উঠে বেজে তোমায় ঐ গানের মাঝে , এই পথ গেছে মিশে আমার বেলা শেষে , স্বপ্ন ফিরে আসে ।
আখি' চিঠিটা নোনা জ্বলে ভিজে উঠতে থাকে । তার স্মৃতি আমি গড়ে রেখেছি নোনা স্বপ্ন দিয়ে.....আজো.....। কাল্পনিক ভালেবাসা,, হিমপাখি?