আকাশের মতো, তার চেয়েও বিশাল। বিশাল ছিল তাঁর মন ও ভালোবাসার দরিয়া। সেখান থেকে উঠে আসতো দরদের তুফান। মমতার ঢেউ। সেই ঢেউ আছড়ে পড়তো নবীর (সাঃ) চারপাশে। সকলের হৃদয়ের দু কূল ছাপিয়ে যেত রাসূলের (সাঃ) ভালোবাসার কোমল তুষারে। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সেতো এক মহৎ গুণ! মানুষকে ভালোবাসতেন রাসূল (সাঃ) মন দিয়ে, প্রাণ দিয়ে, জীবন দিয়ে।
কিন্তু এতিম, গরিব, দুস্থ এবং অসহায়দের প্রতি রাসূলের (সাঃ) ভালোবাসার মাত্রাটা ছিল অনেক- অনেক গুণে বেশি। যার কোনো তুলনাই হয় না। সেই ভালোবাসার নজির তো রয়ে গেছে রাসূলের (সাঃ) জীবনেই। তাঁর জীবন-ইতিহাস যেমন শিক্ষণীয় তেমনই পালনীয়।
ঈদ মানেই তো খুশি আর খুশি। আনন্দের ঢল। সবার জন্যই চাই ঈদের আনন্দ। সমান খুশি। কিন্তু চাইলেই কি সব হয়? কিছু ব্যতিক্রম তো থেকেই যায়। যেমন রাসূলের (সাঃ) সময়ে এক ঈদে, নামাজ শেষে ঘরে ফিরছেন দয়ার নবীজী (সাঃ)। তিনি দেখলেন মাঠের এক কোণে বসে কাঁদছে একটি তুলতুলে কোমল শিশু। এই খুশির দিনেও কান্না! অবাক হলেন রাসূল (সাঃ)। তাঁর হৃদয়ের বেদনার ঢেউ আছড়ে পড়লো। রাসূল (সাঃ) ছেলেটির কাছে গিয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
শিশুটি বললো, আমার আব্বা-আম্মা নেই। কেউ আমাকে আদর করে না। কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আমি কোথায় যাবো? এতিম নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন। ছেলেটির কথা শুনে গুমরে কেঁদে উঠলো নবীজীর (সাঃ) কোমল হৃদয়। জেগে উঠলো তাঁর মর্মবেদনা। তিনি পরম আদরে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে গেলেন। হযরত আয়েশাকে (রাঃ) ডেকে বললেন, হে আয়েশা! ঈদের দিনে তোমার জন্য একটি উপহার নিয়ে এসেছি। এই নাও তোমার উপহার। ছেলেটিকে পেয়ে দারুণ খুশি হলেন হযরত আয়েশা (রাঃ)। দেরি না করে মুহূর্তেই তাকে গোসল করিয়ে জামা পরালেন। তারপর তাকে পেট ভরে খেতে দিলেন।
রাসূল (সাঃ) ছেলেটিকে বললেন, আজ থেকে আমরাই তোমার পিতা-মাতা। আমরাই তোমার অভিভাবক। কি, খুশি তো! রাসূলের (সাঃ) কথা শুনে ছেলেটির চোখেমুখে বয়ে গেল আনন্দের বন্যা। এই ছিল এতিমের প্রতি রাসূলের (সাঃ) ভালোবাসার এক বিরল দৃষ্টান্ত! রাসূল (সা) শুধু এতিমদের প্রতিই যে এমন সদয় ছিলেন, সহমর্মী ছিলেন তাই নয় তিনি তাঁর অধীনস্থদের প্রতিও ছিলেন সদা সজাগ ও দরদি। মায়া-মমতার চাদরে তাদেরকে আঁকড়ে রাখতেন। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়, মনে যেন কোনোপ্রকার দুঃখ না থাকে দয়ার নবী (সাঃ) সেদিকে খেয়াল রাখতেন সর্বক্ষণ।
রাসূলের (সাঃ) দু�জন খাদেম বা চাকর ছিলেন। একজন হযরত যাইদ ও আর একজন হযরত আনাস (রাঃ)। তাদের সাথে রাসূল (সাঃ) কখনোই মনিবসুলভ আচরণ করতেন না। কড়া ভাষায় কথা বলতেন না। খারাপ ব্যবহার করতেন না। মেজাজ দেখাতেন না। আদেশ কিংবা নির্দেশে কঠোরতাও দেখাতেন না। বরং আপন পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের সাথে ব্যবহার করতেন। একই খাবার খেতেন। একই ধরনের জীবন-যাপন করতেন। কী আশ্চর্যের ব্যাপার! আজকের দিনে যা কল্পনাও করা যায় না। হযরত যাইদের (রাঃ) কথাই বলি না কেন! ছোট্টবেলায় তিনি মা-বাপ থেকে হারিয়ে যান।