ফেসবুক। নামটা শুনেই চাঙ্গা হয়ে বসলেন নাকি? আসলেই

নগর জীবনে এমনকি এর বাইরেও এখন ফেসবুকের পরিধি ব্যপ্ত। উঠতে বসতে ফেসবুক। জ্যামে বসে ফেসবুক- “উফ্!

তো একদিন সেই ছেলে তাকে বলল- আমার আরেকটা অ্যাকাউন্ট আছে, আমি তোমাকে সেখান থেকেও রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি। সেরকম কোন অ্যাকাউন্ট থেকে কোন রিকোয়েস্ট সিলভি খুঁজে পেল না। তবে একই নামে ভিন্ন প্রোফাইল পিকবিশিষ্ট আরেকজনের রিকোয়েস্ট দেখল সে। ছেলেটাকে ব্যাপারটা বলতেই সে যা বলল তা সিলভির বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। এটাই ঐ “সুদর্শন যুবকের” আসল চেহারা। আর যার ছবি তার আগের অ্যাকাউন্টে দেওয়া, সে একজন বিদেশী মডেল। নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে মেয়েদের সে আকৃষ্ট করতে পারত না। তাই এই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ আর কি! সিলভির সাথে কথা বলে তার মনে হয়েছে যে তাকে বিশ্বাস করা যায় তাই সে তাকে সত্যি কথাটা জানিয়েছে।

 

সিলভি আর কথা বাড়ায় নি। ওখানেই তার স্বপ্নের ক্ষান্ত দিয়েছে।

 

আচ্ছা, নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, কেন এসব ঘটনা ঘটছে? ফেসবুক এমন একটা জিনিস- অন্য প্রায় সবকিছুর মত যাকে আমি চাইলে গঠনমূলক, ভাল কাজে ব্যবহার করতে পারি। আবার চাইলে নেতিবাচক বা খারাপ কাজেও করতে পারি। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে আমার “উদ্দেশ্য”। ফেসবুকের ইতিবাচক দিক অনেক, কিন্তু এর কয়েকটা নেতিবাচক দিকের প্রতিও না তাকালেই নয়। যেমন- কথায় কথায় মানুষের সমালোচনা করা, অন্য কারো দোষ খুঁজে বেড়ানো, অন্যকে উদ্দেশ্য করে কটু কথা বলা, অকারণে কষ্ট দেয়া, সম্মান না করা, নিজের বড়াই করা, গীবত করা, নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে গিয়ে প্রতারণা, মিথ্যা কথা বলা, অশ্লীল কথা বলে তাকে “প্রাপ্তবয়স্কদের কৌতুক” হিসেবে নাম দেয়া ইত্যাদি দিন দিন কেমন যেন একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা হয়ত অনেকে বুঝতেও পারছিনা যে এগুলো সাধারণ নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এর কোনটার জন্যই ফেসবুক প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়, দায়ী ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায়।

 

চলুন, প্রথমে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি এগুলোর সাথে জড়িত? আমি কি মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছি? আমার আচরণে কি অন্য কেউ কষ্ট পাচ্ছে?

 

“মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শেখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং নিজ মুঠো বন্ধ করে (কৃপণতা প্রদর্শন করে)। আল্লাহ্‌কে ভুলে গেছে তারা, কাজেই তিনিও তাদের ভুলে গেছেন…।”(১)

 

“তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে তোমরা গোপন করো না।”(২)

 

দেখুন, আমরা অনেকেই মুসলিম। কিন্তু মুসলিম নামধারী হয়ে নিজের নামের কলঙ্ক বাড়াচ্ছি নাতো? আল্লাহ যে আমাকে সতর্ক করে দিলেন? বারবার ভুলে যাই। কিন্তু বারবার মনেও তো করা যায় তাই না? চলুন না আমি আপনি মিলে একটু চেষ্টা করি। একদিন দেখব ইন শা আল্লাহ আমি ঠিকই পারব। আপনিও পারবেন। শুধু শুধু এই জীবন আর মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বোঝা বাড়িয়ে লাভ আছে কি?

 

কেউ হয়ত বলবেন, “আরে ভাই এসব মুখেই বলা যায়, এত কিছু করতে গেলে তো জীবনে কিছু করতেই পারব না। খালি আফসোস করব আর মানুষ আমাকে বেচে খাবে। আর আমার জীবনে কি সাধ আহ্লাদ বলে কিছু নাই?” কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে যখন কেউ আমার ক্ষতি করে বা আমার নামে বাজে কথা বলে তখন তাকে কিছু বলার, এমনকি কষ্ট পাওয়ারও অধিকার আমার আছে কি? তখন কেন আমার সব বিবেক বোধ জাগ্রত হয়? কারণ তখন আমি ভুক্তভোগী, আসামী না। আর কেন ভাবছেন যে এসব না করলে জীবনে সুখের স্বাদ পাওয়া যায় না! এটুকু বলতে পারি যে রাতে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন, আর যদি কিছু নাও পারেন। সুস্থ নৈতিকতা আর মূল্যবোধের অনির্বচনীয় এক ধরণের প্রশান্তি আছে। দ্বিতীয়ত, জীবন সম্পর্কে আমাদের পরিপ্রেক্ষিত আসলে কিরকম হওয়া উচিত?

 

“তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়াকৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটো হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।”(৩)

 

আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে কি? আপনি স্বয়ং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পাচ্ছেন। কাজেই আপনাকে আহবান জানাই আমার এই প্রচেষ্টায়। আমি চেষ্টা করছি, আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখছি- কারণ তাঁর সাহায্য ছাড়া আমি অসহায়। সাড়া দেবেন কি? অপেক্ষায় রইলাম। মনে রাখবেনঃ

 

“তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, আপনার পালনকর্তা তা জানেন।”(৪)


Polok1559

22 Blog posts

Comments