মায়ের মত মা আসমা বিনতে আবু বকর (রা)। এক মহান মহিলা সাহাবী। পিতাও ছিলেন প্রথম খলিফা এবং খুব মর্যাদাবান এক সাহাবী হযরত আব

হযরত আসমাকে বলা হতো জাতুন নিতাকাইন। অর্থাৎ দু’টি কোমর বন্ধনীর অধিকারিণী। এটা কেন বলা হতো? কারণ মক্কা থেকে মদী?

তার মৃত্যুর পর হিজাজ, মিসর, ইরাক ও খুরাসানসহ সিরিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলের লোক আসমার পুত্র আবদুল্লাহকে খলিফা বলে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এতে ক্ষেপে উঠলো উমাইয়া রাজবংশ। আবদুল্লাহকে দমনের জন্য তারা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নেতৃত্বে এক বিরাট শক্তিশালী বাহিনী পাঠালো।

 

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল দুই পক্ষের মধ্যে। এক সময় আবদুল্লাহর বাহিনীর অনেকেই দলত্যাগ করে চলে গেলেন বিজয়ের সম্ভাবনা না দেখে। বাকিদের নিয়ে আবদুল্লাহ আশ্রয় নিলেন কাবার হারাম শরীফে। সামনেই চূড়ান্ত সংঘর্ষ।

 

আবদুল্লাহ এই সময়ে ছুটে গেলেন প্রাণপ্রিয় মায়ের কাছে।

 

আসমা তখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। চোখেও দেখতে পান না। তবুও আবদুল্লাহ মায়ের সাথে শেষ পরামর্শের জন্য ছুটে এসেছেন। তাকে দেখেই আসমা জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার! তুমি এখন এখানে কেন? হাজ্জাজ বাহিনীরা হারাম শরীফে অবস্থানরত তোমার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে, আর তুমি ছুটে এসেছো এখানে!

 

আবদুল্লাহ বললেন, আপনার সাথে পরামর্শের জন্য এসেছি। এখন আমি কী করবো, বলে দিন আম্মা!

 

পরামর্শ? কোন্ বিষয়ে? জিজ্ঞেস করলেন আসমা।

 

আবদুল্লাহ বললেন, হাজ্জাজের ভয়ে অথবা তার প্রলোভনে আমার দলের অনেকেই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। এমনকি আমার সন্তান ও আমার পরিবারের লোকেরাও পরিত্যাগ করেছে আমাকে। এখন আমার সাথে অল্প কিছু লোক আছে। তারা যত সাহসীই হোক না কেন, হাজ্জাজের শক্তিশালী বাহিনীর সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারবেন না। এদিকে উমাইয়া প্রস্তাব পাঠাচ্ছে, আমি যদি আবদুল মালিক ইবন মারওয়ানকে খলিফা বলে মেনে নিই, যদি তার হাতে বাইয়াত হই তাহলে সে আমাকে অনেক সম্পদ ও পার্থিব সুখ ভোগের ব্যবস্থা করবে। আমি যা চাইবো, সে তাই দেবে। এখন আপনিই বলুন আম্মা, আমি কী করবো?

 

হযরত আসমা ধৈর্যের সাথে শুনলেন পুত্র আবদুল্লাহর কথা। তারপর দৃঢ়তার সাথে বললেন, ব্যাপারটি একান্তই আমার নিজস্ব। আর তুমি তোমার নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জান। যদি তোমার বিশ্বাস থাকে যে, তুমি সত্যের পথে আছ এবং মানুষকে হকের পথে আহবান করছো, তাহলে তোমার পতাকাতলে থেকে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তুমিও তাদের মতো অটল থাকো। আর যদি তুমি দুনিয়ার সুখ-সম্ভোগের লোভের প্রত্যাশী হও, তাহলে বলবো-তুমি একজন নিকৃষ্টতম মানুষ। তুমি নিজেকে এবং তোমার সাথীদেরকে ধ্বংস করেছো।

 

আবদুল্লাহ বললেন, যুদ্ধ চালিয়ে গেলে নিশ্চিত আজ আমি মারা যাব। আসমা জবাবে বললেন, হাজ্জাজের কাছে তুমি স্বেচ্ছায় আত্মসর্মúণ করবে এবং তার দলের ছেলেরা তোমার মস্তক নিয়ে খেলা করবে। তার চেয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়াই উত্তম।

 

আবদুল্লাহ বললেন, আম্মা! আমি মরতে ভয় পাচ্ছি না মোটেও। আমার ভয় হচ্ছে, তারা আমার হাত-পা কেটে আমাকে বিকৃত করে ফেলবে!

 

পুত্রের কথা শুনে আসমার কণ্ঠে বেজে উঠলো আবারো সাহস ও দৃঢ়তার বজ্রধ্বনি : নিহত হবার পর মানুষের ভয়ের আর কিছুই নেই। কারণ, জবেহ করা ছাগলের চামড়া তোলার সময়  সে আদৌ কষ্ট পায় না। দৃঢ়তার সাথে আসমা, একজন সদ্যশহীদের মা বললেন, ‘তুমি তার দুনিয়া নষ্ট করেছো। আর সে তোমার পরকাল নষ্ট করেছে। তুমি তাকে ‘যাতুন নিতাকাইন’ বলে নাকি ঠাট্টা করেছো। আল্লাহর কসম, আমিই ‘যাতুন নিতাকাইন’। একটি নিতাক নিয়ে আমি রাসূল (সা) ও আমার পিতা আবু বকরের খাবার বেঁধেছি। আর একটি নিতাক আমার কোমড়েই আছে। মনে রেখ, রাসূলের (সা) কাছ থেকে শুনেছি, সাকিফ বংশে একজন মিথ্যাবাদী ভণ্ড এবং একজন জালিম পয়দা হবে। মিথ্যাবাদীকে তো আগেই দেখেছি। আর সেই জালিমটা হচ্ছো তুমি।’

 

এই হচ্ছেন দুঃসাহসিনী এক মা-হযরত আসমা (রা)। শহীদ পুত্রের বীভৎস দৃশ্যের সামনেও যিনি সমান শান্ত, শান্ত এবং স্থির এক সাওর পর্বত।


Shohag333

79 Blog posts

Comments