বিশাল পৃথিবী। বিশাল আকাশ। বিশাল সাগর-মহাসাগর

Comments · 8 Views

এত যে বিশাল তার চেয়েও বিশাল হতে পারে মানুষ এবং মানুষের হৃদয়। কাজই মানুষকে বিশাল এবং মহৎ করে। এই সত্য অবধারিত। ??

জবাবে রাসূল (সা) বললেন : তোমরা আমার মাতুল গোত্র। আমিই তোমাদের নকিব।

 

এটা ছিল বনি নাজ্জারের জন্য বিরাট এক মর্যাদা।

 

রাসূল (সা) তাঁকে শুধু নকিবই মনোনীত করেননি, বরং নকিব আল-নুকাবা বা প্রধান দায়িত্বশীল বলেও ঘোষণা দেন।

 

একমাত্র জাবির ইবন আবদুল্লাহ ছাড়া আসয়াদ ছিলেন এই আকাবিদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।

 

আকাবার তৃতীয় বাইয়াতের পর এক বিরাট দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে তিনি মদীনায় ফিরে যান।

 

বয়স অল্প হলে কি হবে! তাঁর ঈমানী জযবা বা আবেগ ছিল অতি তীব্র।

 

তিনি মদীনায় জামায়াতে নামায আদায়ের ব্যবস্থা করেন এবং চল্লিশজন মুসল্লি নিয়ে সর্বপ্রথম মদীনায় জুম’আর নামাযও আদায় করা শুরু করেন।

 

মদীনায় সর্বপ্রথম কে জুম’আর নামায কায়েম করেন সে ব্যাপারে মতভেদ আছে। হযরত রাসূলে কারীম (সা) মদীনায় পৌঁছার পর যদিও আবু আইউব আল-আনসারীর (রা) বাড়িতে ওঠেন, তবে তাঁর বাহন উটনীটি আসয়াদের মেহমান হয়। রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় পৌঁছার প্রথম ক্ষণটিতে উটনীটি সর্ব প্রথম বসে পড়ে এবং পরে সে স্থানটি রাসূলুল্লাহর (সা) মসজিদ ও বাসস্থানের জন্য নির্বাচিত হয়।

 

সেই ভূমির মালিক ছিল সাহল ও সুহাইল নামক ইয়াতিম বালক। আর তাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আসয়াদ ইবন যুরারা।

 

রাসূল (সা) বালক দু’টির মুরব্বি আসয়াদের নিকট ভূমির মূল্য জানতে চান।

 

বালক দু’টি সাথে সাথে বলে ওঠে, আমরা আল্লাহর কাছেই এর মূল্য চাই।

 

যেহেতু বিনা মূল্যে রাসূল (সা) ভূমি গ্রহণে রাজি হলেন না তাই হযরত আবু বকর (রা) তার মূল্য পরিশোধ করেন।

 

তবে কোন কোন বর্ণনায় জানা যায়, আসয়াদ ইবন যুরারা তাঁর বনি বায়দায় অবস্থিত একটি বাগিচা মসজিদের এই ভূমির বিনিময়ে ইয়াতিমদ্বয়কে দান করেন।

 

রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আগমনের পর আবু আইউবের বাড়িতে অবস্থানকালে আসয়াদ ইবন যুরারা এক রাত পর পর পালাক্রমে তাঁর জন্য খাবার পাঠাতেন।

 

আসয়াদের বাড়ি থেকে খাবার আসার পালার রাতে তিনি জিজ্ঞেস করতেন : আসয়াদের পিয়ালাটি কি এসেছে?

 

বলা হতো, হ্যাঁ।

 

তিনি বলতেন : তা হলে সেটি নিয়ে এস।

 

বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, তাতে আমরা বুঝে নিতাম তাঁর খাবারটি রাসূলুল্লাহর (সা) অত্যন্ত প্রিয়।

 

রাসূল (সা) মদীনায় আবু আইউবের বাড়িতে ওঠার পর একদিন জিজ্ঞেস করলেন : আবু আইউব, তোমার কি কোন খাট আছে?

 

উল্লেখ্য যে, মক্কায় কুরাইশরা খাটে ঘুমাতে অভ্যস্ত ছিল।

 

আবু আইউব বললেন : না।

 

এ কথা আসয়াদ ইবন যুরারার কানে গেল। তিনি একটি স্তম্ভ ও কারুকার্য করা পায়াবিশিষ্ট একটি খাট পাঠিয়ে দিলেন।

 

রাসূল (সা) তাঁর ওপর ঘুমাতেন।

 

অতঃপর রাসূল (সা) যখন আমার ঘরে চলে আসেন এবং আমার মা আমাকে যে খাটটি দেন তাতেই তিনি ঘুমাতেন।

 

হযরত তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাতের পর আসয়াদের বাড়িতে ওঠেন।

 

হযরত হামযাও তাঁর বাড়িতে ওঠেন।

 

মসজিদে নববীর নির্মাণকাজ তখন চলছে।

 

এমন সময় প্রথম হিজরির শাওয়াল মাসে তাঁর পরকালের ডাক এসে যায়। তিনি জাবহা নামক কণ্ঠনালীর এক প্রকার রোগে আক্রান্ত হন।

 

হযরত রাসূলে কারীম (সা) নিজ হাতে তাঁর আক্রান্ত স্থানে সেক দেন, তাঁর মাথায় হাত দেন; কিন্তু কোন উপকার দেখা গেল না।

 

তিনি মারা যান।

 

তাঁর মৃত্যুতে রাসূলুল্লাহ (সা) খুব ব্যথিত হন। তিনি বলেন, এখন তো ইহুদিরা বলে বেড়াবে যদি তিনি নবী হতেন তাহলে তাঁর সাথী মরতো না, অথচ আমি কি মৃত্যুর চিকিৎসা করতে পারি?

 

হযরত রাসূলে কারীম (সা) তাঁর জানাযার নামায পড়ান এবং মদীনার বাকী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করেন।

 

বলা হয়ে থাকে রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় হিজরাতের পর এটাই প্রথম মৃত্যু। আর এটাও ধারণা করা হয় যে, এবারই সর্বপ্রথম রাসূল (সা) জানাযার নামায আদায় করেন।

 

আনসারদের ধারণা মতে বাকীতে দাফনকৃত প্রথম মুসলমান আসয়াদ আর মুহাজিরদের মতে উসমান ইবন মাজউন।

 

মৃত্যুকালে হযরত আসয়াদ দু’টি কন্যা সন্তান রাসূলুল্লাহর (সা) জিম্মায় ছেড়ে যান। রাসূল (সা) আজীবন তাদের দেখাশোনা করেন। মোতির দানা মিশ্রিত সোনার বালা তিনি তাদের হাতে পরান। এক মেয়েকে তিনি সাহল ইবন হুনাইফের সাথে বিয়ে দেন এবং সেখানে তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করে আবু উমামা বিন সাহল।

 

হযরত আসয়াদ ছিলেন প্রকৃত অর্থে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন জোছনা প্লাবিত এক চাঁদ। যে চাঁদ দোলে সাগরের বুকেও।

 

তাঁর মত উন্নত চরিত্রের মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের সকল সময় চেষ্টা করে যাওয়া প্রয়োজন।

Comments
Read more