জান্নাত আজ আমাদের রিলেশনের এক মাস হয়ে গেল অথচ তুমি আমাকে এখন পর্যন্ত তোমার একটা ছবি দিলা না। প্লিজ আজকে একটা ছবি দাও তোমার ?
–তোমাকে বলছি না এসব ছবির আবদার করবে না। যদি দেখার শখ থাকে তাহলে আমাদের বাড়িতে এসে দেখে যাও।
–এটা কেমন কথা তুমি বলো? এখন কি আমি যেতে পারবো? তুমি বোঝার চেষ্টা করো না কেন? একটা ছবি দিলে কি হবে?
–তোমাকে বলছি না যদি দেখতে চাও তাহলে আমার বাড়িতে আসো। আমার এসব জোরাজুরি ভালো লাগেনা।
–তোমার বাড়িতে কিভাবে যাব?
–আমি কিছু জানিনা..
–আচ্ছা তোমার জানতে হবে না। দেখি যেদিন যেতে পারব সেদিনই তোমাকে দেখবো।
–এইতো ছেলের মত কথা।
–হইছে আর বলতে হবে না।।
–ঠিক আছে বললাম না...
–ওই বাবু এখন বাই মা আসছে পরে কথা হবে।
তাই বলে ফোনটা রেখে চলে গেল। এখন আসেন আমাদের পরিচয়টা জেনে নিন> আমি হৃদয় এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর যে মেয়েটির সাথে কথা বললাম তার নাম জান্নাত। আমি ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করি আর জান্নাত এর বাড়ি সিরাজগঞ্জ। জান্নাত এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমাদের প্রথম পরিচয় ফেসবুকে। আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায় কিন্তু কখন যে আমি অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেলি আমি নিজেও জানিনা। তাকে কোনদিন দেখি নাই কিন্তু আমার মনের ঘরে তাকে নিয়ে একটি স্বপ্ন বেঁধেছি। ওর কাছে যতদিন ছবি চাইছি ততদিন আমাকে নিষেধ করছে। আপনারা দেখলেন তো এখন কি বলল?
–হৃদয় একটু এদিক আয়তো (মা)
পরিচয়টা তো দিয়ে দিলাম এখন মা ডাকছে বাকিটা আপনারা পড়ে নিন......
–হ্যা মা বলো কি হয়েছে?
–ঘরটা এমন অবহেলা করে রেখেছিস কেন? নিজের ঘরটা গুছিয়ে রাখতে পারিস না?
–ওহো মা! তুমি জানো আমি একটু অগোছালো তবুও প্রতিদিন একই কথা কেন বল?
–দুদিন পরে বউ যখন ঘরে আসবে তখন কি করবি হ্যাঁ?
–মা তুমি যে কি বল না? তখন তো তোমার বৌমাই এসব করবে..
–হুম হইছে আর বলতে হবে না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে আয় নাস্তা রেডি আছে খেয়ে ভার্সিটিতে যা..
–ঠিক আছে মা।
তারপর আমি রেডি হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে যাই। ভার্সিটিতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে ইব্রাহিম। সেই ইন্টার থেকে আমরা দুজনে একসাথে লেখাপড়া করছি। দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড। কখনো আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়না.. ভার্সিটিতে যেতেই দেখলাম ইব্রাহিম বট গাছের নিচে বসে আছে..
–কিরে কখন আসলি?
–এইতো দোস্ত 5 মিনিট হলো। আজ দেখছি তোর মন খারাপ ব্যাপার কি? কিছু হয়েছে নাকি?
–আরে নারে দোস্ত কিছু হয়নি। তো তুই একা বসে কেন আর সবাই আসেনি?
–হুম সবাই এসেছে। সবাই যে যার ক্লাসে চলে গেছে, আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি এখানে।
–তো তুই তোর ক্লাসটা মিস করলি?
–আরেকদিন ক্লাস না করলে কিছু হয় না..
–পরে ক্লাস কয়টায়?
– ১০.৪০ এ....
–আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ততক্ষণ একটু আড্ডা দেই।
–হ্যাঁ তাইতো বলবি। মহারাজ দেরি করে আসবেন আর ক্লাস মিস করে আড্ডা দিতে হবে।
–দোস্ত কাল থেকে আর লেট হবে না প্রমিস।
–তুই তো প্রতিদিনই প্রমিস করিস। একদিকে কি তা রাখতে পারছিস?
–সরি দোস্ত আর হবেনা।
–ঠিক আছে।
তারপর বসে দুজনের আড্ডা দেই। ১০.২০ এ সবার ক্লাস শেষ হয় আর সবাই বটগাছ তলা চলে আসে। তারপর সবাই মিলে আড্ডা দেই..
–এই সুমন তোর বাবা কি অবস্থা এখন? (সুমনের বাবা হার্টের রোগী। হাসপাতালে ভর্তি আছে, সুমনের কোন বড় ভাই নেই তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করে আর বাবা-মা কে দেখাশোনা করে। যার কারণে আমরা সবাই সুমনকে একটু বেশি ভালোবাসি)
–ঐ আগের মতোই রে(সুমন)
–আচ্ছা ডাক্তার কি বলছে? (হৃদয়)
–ডাক্তার বলছে সময় লাগবে কিন্তু নিশ্চয়তা নেই...(সুমন)
–মন খারাপ করিস না দোস্ত সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে (হৃদয়)
–দোয়া করিস দোস্ত (সুমন)
–আমরা তো সব সময় দোয়া করি। তোর মা-বাবাকে আমাদের মা-বাবা নয়? (হৃদয়)
–হ্যাঁ অবশ্যই (সুমন)
–তাহলে এমন কথা বললি কেন? (হৃদয়)
–সরি দোস্ত ভুল হয়ে গেছে আর বলবো না (সুমন)
–হুম ঠিক আছে। আচ্ছা মিলি আজকে মেকআপ করিস নাই নাকি? (হৃদয়)
–তুই আবার আমার মেকআপ নিয়ে কথা বলছিস (মিলি)
–আছে হৃদয় তোর মিলি পিছে না লাগলে কি পেটের ভাত হজম হয় না নাকি? (ইব্রাহিম)
–একদম ঠিক বলছিস। শালা সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে (মিলি)
–হইছে এখন সাপোর্ট পাইয়া এত লাফালাফি করতে হবে না। তুমি যে মেকআপ ম্যান তা তো সবাই জানে। সারাক্ষণ মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত হি. হি. হি.(হৃদয়)
–এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে হৃদয় (মিলি অনেক রাগ হয়ে বলল)
–আচ্ছা বইন ভুল হইছে মাফ কইরা দে (হৃদয়)
–হইছে এত ঢং করতে হবেনা (মিলি)
–বাবা না চাইলেও দোষ। আচ্ছা ঠিক আছে আজকের পর আর কোনদিন তোর কাছে মাফ চাইবো না (হৃদয়)
–আচ্ছা তোরা কি শুরু করলে বলতো? (ইব্রাহিম)
–আছে সবকিছু বাদ দে তো দোস্ত। খুব ক্ষুধা পাইছে চল ক্যান্টিনে যাই (সুমন)
–তোর খোদা লাগছে তুই মিলিয়ে নিয়ে যা। আমাদের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে আমি আর ইব্রাহিম ক্লাসে গেলাম।(হৃদয়)
–এখন তোদের আবার ক্লাস আছে?(সুমন)
–ক্লাস না থাকলে কি আমি যাই?(হৃদয়)
–সবই বুঝি! না খাওয়ানোর ধান্দা শুধু (মিলি)
–ওই কি বললি তুই? তোদের আমি খাওয়াই না? প্রতিদিন যে ক্যান্টিনে বসে এটা ওটা খাস কি খাওয়ায়? (হৃদয়)
–আহা করত হৃদয়(ইব্রাহিম)
–আচ্ছা ঠিক আছে।তোরা ক্যান্টিনে গিয়ে বস আমরা ক্লাস করে আসছি তারপর একসাথে খাওয়া দাওয়া করব। আর তোদের যদি দেরি না পছন্দ হয় তাহলে খেয়ে নিতে পারিস আমি এসে বিল দেবো সমস্যা নাই। (হৃদয়)
–সত্যি দিবি তো?(মিলি)
–হ্যাঁ দেব এখন যা তোরা.....
তাই বলে ওদেরকে রেখে আমি আর ইব্রাহিম ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে ঢুকতে দেখি নতুন একটা স্যার জয়েন করছে আজকে তার ক্লাস। স্যারের আজ আমাদের প্রথম ক্লাস তাই আজকে পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়ে ক্লাস শেষ করে। ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়। ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি হারামিগুলা বসে আছে।
–কিরে তোরে কিছু খাস নি?(ইব্রাহিম)
–তোদের ছাড়া আমরা কখনো কিছু খাইছি? (সুমন)
–আরে বোকা খাইলে কি হইত?(হৃদয়)
–কিছু হতো না কিন্তু তোদের ছাড়া আমরা খাব না তাই খাইনি। (মিলি)
–আচ্ছা খাস নি ভালো করছোস। তো এখন কি খাবি বল?(হৃদয়)
–এখন বেশি কিছু খাবো না হালকা নাস্তা করলে হবে। (মিলি)
–আচ্ছা তাহলে সিংগারা আনি তোরা বোস।
তাই বলে আমি সিংগার আনতে সিংগারার গেলাম সাথে কোলড্রিংক নিলাম। তারপর সবাই নাস্তা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসে লাঞ্চ করে বিকালে একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে দেখি মোবাইলে 29 টা মিসড কল। চেক করে দেখি জান্নাতের কল ছিল। আজ আমি শেষ.. কি মরণের ঘুমাচ্ছিলাম ফোনটা বাজছিল বুঝতে পারিনি। জান্নাত তো আজকে আমাকে মেরে ফেলবে... তাড়াতাড়ি করে জান্নাত কে একটা ফোন করলাম..
–হ্যালো জান্নাত!
–সরি কে আপনি? আর কাকে ফোন?
–আমি জান্নাত সরি। আসলে ভার্সিটি থেকে এসে লাঞ্চ করে একটু ঘুমিয়ে পড়ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি কখন ফোন করছিলা। সরি ??
–তো ঘুম থেকে উঠছেন কেন? জান ঘুমান...
–সরি তো জান।
–তোমার এই সরি আমার আর ভালো লাগেনা।
–আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ছিলাম তো কি করব?
–কিছু করতে হবে না চুপচাপ বসে থাকো বাই....
তাই বলে ফোনটা কেটে দিলো..(আল্লাহ গো মেয়েটা কত রাগ করে। আল্লাহ তুমি মেয়েটাকে একটু হেদায়েত দান করো। কথায় কথায় রাগ করে।) ফোনটা কেটে যাওয়ার সাথে আবার ফোন করলাম...
–কি ব্যাপার আবার ফোন করছ কেন?
–আমার জান পাখিটা.. প্লিজ কথা বলো...
–তোমার সাথে আবার কিসের কথা?
–কথার কি শেষ আছে?
–হ্যাঁ কথা শেষ আছে। তোমার সাথে আমার আর কোন কথা নেই।
–প্লিজ জান এমনটা করোনা। প্লিজ কথা বলো..
–আচ্ছা ঠিক আছে বল কি বলবে?
–আই লাভ ইউ।
–এটা ছাড়া আর কোন কথা আছে?
–আছে তো!
–তো সেই কথা বলো।
–আমার না খুব ইচ্ছা করছে তোমার কাছে ছুটে যেতে...
–তো আসো না কেন?
–কি করব বলো সিরাজগঞ্জ তো আমার কোন রিলেটিভ নেই যে তার পাশেই যাব।
–রিলেটিভ না থাকলে কি আসা যায় না?
–যাওয়া যায় তো কিন্তু আমি তো কিছুই চিনি না কোথায় যেতে কোথায় চলে যাব।
–হা হা হা.. তুমি কোন দুনিয়ার মানুষ হুম?
–কেন?
–তুমি ডিজিটাল যুগে এসে হারিয়ে যাওয়ার ভয় করছ?
–আমি আমার ভয় করিনা। যদি তুমি কোন কারণে হারিয়ে যাও সেদিন আমার মরন ছাড়া কিছু হবে না।
–হুম হইছে এখন আর ইমোশনাল হতে হবে না..
–হুম।
তারপর জান্নাতের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে একটু ছাদে যাই। আমাদের ছাদে একটি দোলনা আছে তো ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিলাম এমন সময় সুমনের ফোন আসলো....