স্যারঃ- হুম আসতে পারো(ব্লাকবোর্ডে লিখতে লিখতে)
ওই কে রে...??(কিছুটা রাগান্বিত বিরক্ত গলায় আমার দিকে তাকিয়ে ই কথাটা বললো।
আর ক্লাসের সবাই কেমন কেমন করে যেন তাকিয়ে
আছে আমার আর স্যারের দিকে।
একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার স্যারের দিকে..
তবে সবাই খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে... ফ্রী তে কিছু
বিনোদন নেওয়ার জন্যে।
কারোর মুখে কোন কথা নেই ক্লাসের পড়াশোনার দিকেও খেয়াল নেই।
দুই বন্দরের বানদ্রামী দেখার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
কারণ এগুলো বিষয় আমার আর স্যারের কাছে
নতুন কিছু না।)
আমি জানতাম এমনটা হবে।
প্রথমে বুঝতে পারে নাই কে ক্লাসে ঢুকতে চেয়েছিল
তাই অনুমতি দিলেও পরে আবার শুধরে নেওয়ার
চেস্টা এটা।
মানে আমাকে শুধু মাত্র আমাকেই স্যার ক্লাসে লেট করে ঢুকার অনুমতি দিবেন না।
আমি আবার স্যারের প্রিয় ছাত্র কি'না তাই মাঝে
মাঝেই ক্লাসের বাইরে রাখার চেস্টা করে।
পারলে কলেজের বাইরেও রাখতে চায়।
কিন্তু তা পারবে না...
আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিলে স্যারের যে
রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
অবশ্য স্যার এমনিতে আমাকে অনেক ভালবাসে।
যদিও তার যথেষ্ট পরিমাণ করাণ আছে..
আস্তে আস্তে না হয় সব বলি...
আপাদত ক্লাস রুমের ভিতর যেতে হবে।
এমনিতেই প্রায় ২৫ মিনিট লেট করে ফেলেছি।
কিন্তু স্যারের হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে না উনি আমাকে
ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিবেন।
না দিলে না দিল...?
তাতে আমার কি??
স্যারের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকতে হবে এমন
কোন কথা কি কোথাও লেখা আছে??
আর এমন কথা যদি কোথাও এমনকি সংবিধানেও
লেখা থাকতো তবুও মানতাম না।
কারো কোন কথা বা আদেশ উপদেশ মনে চলতে
হবে বা অন্যের করা রুলস মেনে চলতে হবে এমনটা
ভাল ভদ্র ছেলে আমি কখনোই ছিলাম না।
নিজের হাতের তৈরি করা রুটিন মাফিক চলতে
পারি না আর আমি কি'না অন্যের করা নিয়ম মেনে
চলবো... হুহ্হহ
তাই স্যারের অনুমতির অপেক্ষা না করেই এক পা
কেবলমাত্র ক্লাস রুমে ঢুকিয়েছি..
স্যারঃ- কে তুই..??
।
আমিঃ- কি বলেন স্যার.??
আপনি আমাকে চিনতে পারতেছেন না.??
স্যার আপনার কি মাথা নষ্ট.., মানে পাগল টাগল
হলেন না কি??
আমার কিন্তু সেই হাসি পাচ্ছে..
স্যার একটু অনুমতি দিলে মন খুলে হেসে নিতাম।
হি হি হো হো হো...
।
স্যারঃ- চুপ অসভ্য ছেলে...
আর একবার যদি হেসেছিস না তবে আমি তোর...
আমি তোকে যা জিগ্যেস করেছি তার উত্তর দে..?
।
আমিঃ- আচ্ছা স্যার হাসবো না আর।
আমি জানতাম না যে স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক
হয়েও হাসার মত এমন বিষয়ে বারন আছে।
জানলে এই দেশে জন্মই নিতাম না।
হে স্যার বলেন কি জিগ্যেস করেছেন আর কি
উত্তর দিবো??
।
স্যারঃ- কে তুই..??
।
আমিঃ- স্যার এটা আপনি কি বলেন.??
আমি কে তা আপনি জানেন না??
ঐ তরা স্যারকে কেউ ধর তো..
স্যারের মাথা নষ্ট হয়ে পাগল হয়ে গেছে
তাড়াতাড়ি করে যদি পাবনা না পাঠানো যায় তাহলে
যে কোন সময় কাউকে কামড়ে দিতে পারে।
।
স্যারঃ- চুপ বেয়াদব কোথাকার..
একদম বেয়াদবী করবি না আমার সাথে।
যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে??
।
(না স্যার মনে হয় সত্যি সত্যি ক্ষেপে আছে।
তাই আর বেশি ফাইজলামি করা ঠিক হবে না।
।
আমিঃ- স্যার...
আমি, আমি কৌশিক, স্যার।
আপনার অতি কাছের গুনধর ছাত্র যে কি'না এক
সময় এই কলেজের সন্মান মাথার উপরের ঐ আকাশ
সমান করে দিবে।
পুরো কলেজের একমাত্র ভদ্র, লক্ষি, সভ্য ছেলে।
।
স্যারঃ- হ তোর মত এমন ভদ্র ছেলে আরেকটা থাকলে
কলেজ কর্তৃপক্ষকে দুই দিন পর কলেজ বিক্রি করে
রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ
থাকবে না।
এতটা সন্মান বয়ে নিয়ে আসবি যে সকল ছাত্র ছাত্রী,
স্যারদেরকে সবাই ফুলের মালা গলায় পড়িয়ে দেশের
বিভিন্ন জায়গায় চাপড়া বিক্রি করে খেতে হবে।
।
আমিঃ- স্যার এটা কিন্তু ভাল ব্যাবসা..
আমি ক্লাস শেষে প্রতিদিন ডিস্ট্রিক গেইটে গিয়ে
চাপড়া খাই..
সেই বেচা কেনা হয় সেখানে..
স্যার আপনি ভাল একটা উদ্যোগ নিয়েছেন যে
আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহি চাপড়া সারা দেশে
ছড়িয়ে দিবেন।
আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না স্যার..
আপনি মহান...
আমি এক চাপড়া বিক্রেতার কাছে শুনেছি সে নাকি
প্রতি দিন গড়ে হাজার টাকার উপর ইনকাম করে।
স্যার আমি তো মনে মনে প্লান প্রোগ্রাম করেই রেখেছি
যে আর কিছু দিন পর থেকে আমি নিজেও সেখানে
একটা চাপড়ার দোকান দিব।
আর স্যার আপনি তো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন
তাই আজ থেকে নিয়ত পাল্টাইয়া ফেললাম...
আপনার সাথে আমি নিজে থেকে আপনার সহযোগিতা
করবো স্যার আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি।
আপনি আপনার লক্ষে এগিয়ে যান...
আমি না না শুধু আমি না ক্লাসের সবাই আছে
আপনার সাথে...
কি বলস বন্ধুরা...(ক্লাসের সকলের উদ্দেশ্য বললাম)
আর সকলেই তা হ্যা বলে সম্মতি দিয়ে আমার কথার
সাথে তাল মিলিয়ে বলল ওরাও আছে আমাদের সাথে
আর সাথে সাথেই বিকট শব্দে হাসি হেসে ক্লাস রুমটাকে সার্কাস দেখানোর রুম করে দিল।
সে কি হাসি ☺..
কোন ভাবে তা থামছেই না।
স্যারে তো রেগেমেগে আগুন...
কি করবে তা ভেবেই পাচ্ছেন না।
।
স্যারঃ- চুপ হারামির দল একদম চুপ(ক্লাসের সবাইকে
উদ্দেশ্য করে)
এই বেয়াদবের কথা শুনে দাঁত বের করে হাসা হচ্ছে... না??
তোরা ও এই বেয়াদবের সাথে মিশতে মিশতে বেয়াদব
হয়ে যাচ্ছিস।
ঐ বেয়াদব (আমাকে) এতক্ষণ কই ছিলি তুই??
ক্লাস কয়টায় শুরু হয়েছে আর এখন কয়টা বাজে??
।
(আপনারা নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন স্যার বারবার কেনো
আমাকে বেয়াদব বলে যাচ্ছেন।
তাহলে আমার পরিচয়টা দিয়েই দেই..তাহলে সব ক্লিয়ার হবে।
আমি কৌশিক আহমেদ।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
যে কলেজে দাড়িয়ে আছি আমি এই কলেজেই পড়ি।
আর যে ক্লাসে ঢুকার জন্যে এত কিছু তা আমার
ক্লাস রুম।
আর যে স্যারের সঙ্গে ঝগড়া করতেছি উনি আমাদের
ইলেকট্রনিক্স ক্লাস নেন।
স্যারের নাম আমির হামজা..
বাবা মায়ের অনেক ইচ্ছা যে তাদের একমাত্র সন্তান
ইঞ্জিনিয়ার হবে।
কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মত কোন যোগ্যতাই যে
আমার মধ্যে নেই।
টেনেটুনে দুই বার পরিক্ষা দিয়ে ইন্টার পাশ করেছি
সেই আমি কি'না হবো ইঞ্জিনিয়ার হুহ্ ভাবা যায়??
কিন্তু বাবা মা যে সংকল্প বোধ্য আমাকে ইন্জিনিয়ার
করেই ছাড়বেন তা হোক না ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং..
কিছুটা জোড় পূর্বক আমাকে এই পলিটেকনিকে
ভর্তি করিয়ে দেন।
এটা একটা প্রাইভেট পলিটেকনিক কলেজ।
সরকারী পলিটেকনিকে চান্স পাওয়ার মত এত
ভাল ছাত্র তো কোন কালে ই ছিলাম না তাই এই
প্রাইভেটে ভর্তি হওয়া।
ভাবা যায় আমি নাকি হবো ইঞ্জিনিয়ার..
হা হা হো হো..
আমার খুব হাসি পায় যখন চিন্তা করি আমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ি।
এসব পরিচয়ের চেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে..
আমি আমার এলাকা বা স্কুলের স্বনামধন্য বেয়াদব
ছিলাম আর সে সুক্ষেতি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই
শহরের নাম এই কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে।
আমার এলাকা বা যে সমস্ত স্কুল কলেজে পড়েছি
আগে সেখানে আমার নাম বললে কেউ চিনবে কিনা
তা বলতে পারবো না তবে বেয়াদব বললে নির্দিধায়
কোন প্রকার সংকোচ না রেখেই আমাকে চিনে ফেলবে।
এটা আমার বড় একটা গুন
সবাই কিন্তু বেয়াদব তাও আবার নাম্বার ওয়ান হতে
পারে না।
যদিও আমি বুঝিনা সবাই কেনো যে আমাকে বেয়াদব
বলে ডাকে??
এটা সত্য যে আমি একটু দুষ্ট টাইপের ছেলে।
তবে বেয়াদব হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আমি সব সময়
সত্য আর উচিত কথা বলতে দ্বিধা করি না।
আর এ যুগে যেহেতু সত্যি কথার বা উচিত কথার কোন
দাম নেই তাই আমি বেয়াদব।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি কথা বললে কেমন
করে বেয়াদব হয়??
আচ্ছা তাহলে এক্ষুনি হাতে কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছি যে
কেমন করে সত্যি কথা বলাতে বেয়াদব হয়)
।
আমিঃ- স্যার আমি আগেও বলেছি আজকে ও বলছি..
যে গরু বাঁধলাম না সে গরুকে আপনি কেমন করে
বলেন যে সেই গরু ছুটে গেছে??
আর স্যার আমার তো কোন দোষ নাই।
আপনি নিজেই তো লেট করে এসেছেন।
অনেক সময় ক্লাসে বসে থেকে আপনার দেখা না
পেয়ে একটু বাহিরে গিয়েছিলাম একটা কাজে।
সত্যি স্যার আমি ভেবেছিলাম যে আপনি আর আজকে
ক্লাস করাতে আসবেন না...
তাই স্যার একটু....
।
স্যারঃ-আমি না হয় পাঁচ মিনিট লেট করেছি তাই বলে
তুই বাহিরে যাবি??
কলেজে কি পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাহিরে ঘুরতে বেড়াতে এসেছিস??
।
আমিঃ- স্যার ঘুরতে যাবো কেনো?
আমি তো দরকারী একটা কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম।
।
স্যারঃ মহাশয়ের কাছে কি শুনতে পারি যে আপনি কোন দরকারী কাজের জন্যে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাহিরে
গিয়েছিলেন।
।
আমিঃ- স্যার... সত্যি কথা বলবো নাকি মিথ্যা কথা??
।
স্যারঃ- একদম চালাকি করার চেস্টা করবি না বলে
দিলাম কিন্তু।
সব সত্যি কথা বলবি।
।
আমিঃ- তাহলে তো স্যার আমি বলতে পারবো না।
।
স্যারঃ- পিটিয়ে তোর চামড়া তুলে ফেলবো আজ।
ভালোই ভালোই বল কোথায় গিয়েছিলি কিসের জন্যে
গিয়েছিলি??
।
আমিঃ- স্যার আপনি কিন্তু বলতে বলতেছেন বলেই
কিন্তু বলছি পরে আবার কিছু বইলেন না।
তা স্যার জোড়ে বলবো না কি আস্তে করে আপনার
কানের কাছে এসে বলবো
।
স্যারঃ- তোকে আগেই কিন্তু বলেছিলাম যে কোন প্রকার চালাকি করার চেস্টা করবি না।
যা বলার তা সব জোড়ে করেই বল।
।
আমিঃ- স্যার আসলে আমি একটা অতি জরুরী
একটা কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম আর তা হল..
স্যার আমি বিড়ি খাইতে গিয়েছিলাম স্যার বিড়ি
খাইতে...
স্যার প্রচুর নেশা চেপে ধরেছিল সিগারেটের।
আর আপনিও আসতে লেট করলেন তাই ভাবলাম
এই সুযোগটা সময়টা লাগিয়ে কাজটা হাসিল করি।
।
স্যারঃ- (ক্লাসের সবাইকে উদ্দেশ্য করে) দেখছো দেখছো তোমরা কত্ত বড় বেয়াদব??
(আমাকে) ঐ তুই কি কোনদিনও ভাল হবি না.??
একে তো সিগারেট খাইছোস তার উপর আবার ক্লাসের
লেট এখন তা আবার গর্বের সহীত সবার সামনে
জোড়ে জোড়ে বলতেছিস।
আচ্ছা তোর কি একটুও লজ্জা সরম নাই??
(দেখলেন তো আপনারা সত্যি কথা বললে কিভাবে
বেয়াদব হয়ে যায়??)
।
আমিঃ- আমি জানতাম সত্যি কথা বললে এমনটা হবে
তাই তো প্রথমে বলতে চাই নাই।
আপনি জোড় করলেন তাই তো আমি জোড়ে.....
আর লজ্জা সরম...??
ও গুলো তো স্যার যেদিন সুন্নতে খাৎনা হইছে
সেদিন ই ঐটার সাথে সব সরম কেটে গেছে।
এখন আর লজ্জা বলতে কিচ্ছু নাই স্যার।
।
স্যারঃ- না তোর মতো বজ্জাত হারামি ছাত্রকে আর
এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
আজকেই আমি......
।।
Part:-02
......
আজকেই আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে কথা বলবো
তোর বিষয়ে।
যেভাবেই হোক তোকে এই কলেজ থেকে বের করতেই
হবে।
হারামজাদা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাহিরে গিয়ে বিড়ি
খাইছোস আবার তা জোড় গলায় ক্লাসে এসে
স্যারের সামনে বলতেছিস...
বেয়াদবীর একটা লিমিট থাকা দরকার।
তুই তো সব লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস।
কলেজে কি পড়াশোনা করা বাদ দিয়ে বিড়ি খাইতে
আসিস??
বাবা মা কি এই জন্যে এত টাকা খরচ করে কলেজে পাঠিয়েছে??
তোকে কলেজে রাখলে কলেজটাই বেয়াদব কলেজ
বলে পরিচিত হবে।