--থ্যাংকস
-- সকালে খেয়েছেন কিছু..??
--হ্যা
--কি খেয়েছেন শুনি??
-- খেয়েছি কিছু একটা
-- হুম, বুঝতে পেরেছি।
তানহা পিয়ন কে ডেকে দু কাপ কফি আনালো এবং পিয়ন কে বলে দিল কেউ যেন কে রুমে ঢুকতে না পারে।
হুট করে আমার ডাইরির কথাটা মনে পরতেই তানহা কে বললাম--
-- ম্যাম আমার একটা কথা বলার ছিল..
-- হ্যাঁ বল
-- আপনি কি কাল আমার ডাইরিটা নিয়েছিলেন.?
কথাটা বলতেই তানহার হাসিমুখটা আমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেল, চোখ দুটো বড় বড় করে আমায় বলল --
--কিহ, কি বলতে চাস তুই.তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে প্রশ্ন করিস. তোর কি মনে হয় তোর ব্যক্তিগত জিনিসে আমি হাত দিয়েছি..? আমি কি ওই ধরনের মেয়ে নাকি।
( আমি মাথা নিচু করে বসে আছি..আর তানহার রাগী চেহারাটা দেখছি। রাগলে যেন ওকে আরো সুন্দর লাগে। সে এক অসাধারণ সৌন্দর্য,,
এবার একটু নমনীয় হয়ে বলল--
--তা কি হয়েছে তোর ডাইরির,,ডায়াবেটিস (একটু হেসে)
-- আসলে সকাল থেকে না ডায়রিটা খুঁজে পাচ্ছিনা
--ও সো স্যাড. গোপনীয় কিছু ছিল নাকি ডাইরিতে?
--না আসলে
-- থাক থাক আর বলতে হবে না. দেখ খুঁজে পাস কিনা..? তবে আমি তোর ডাইরি-বাইড়িতে হাত দেই নি, ওকে..?
--জ্বি
-আচ্ছা এবার বল তুই হুট করে ঘর থেকে চলে গিয়েছিলি কেন, নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণটা কি জানতে পারি,..?
--কি করতাম ওখানে থেকে..?
--কি করতাম মানে..?
-- আম্মু চলে যাওয়ার পর বড্ড একা লাগছিলো নিজেকে। খুব একা, আব্বুও কাছে ছিল না। এতটা কষ্ট আমি জীবনে কখনো পাইনি, সব সময় আম্মুর ছায়া তলে ছিলাম তো তাই, আম্মুকে হারিয়ে প্রথম নিজেকে বড় অসহায় লাগছিল।
--তাই বলে ঘর ছেড়ে চলে যাবি..? তোর নিজের ঘর ছেড়ে.?
-- কি করতাম ওখানে থেকে..?
--আমাদের কাছে থাকতি. একসাথে. আমরা একসাথে থাকতাম..
--ভেবেছিলাম, কিন্তু মন সায় দেয়নি। আম্মুকে হারিয়ে একা থাকার তীব্র বাসনা জেগে উঠেছিল মনে। তাই চলে এসেছি।
-- তা কোথায় ছিলে এই 4 বছর..
--ঢাকায় চলে এসেছিলাম, এখানেই ছিলাম চার বছর একটি ছোটখাটো কম্পানিতে চাকরি করেছিলাম। আম্মুর স্মৃতি নিয়ে এভাবেই চলছিল আমার দিন গুলো। তারপরে হঠাৎ একদিন আপনাক সাথে দেখা।
--হুম, প্রেম করিস কারো সাথে..?( মাথা নিচু করে)
-- নাহ, হয়ে উঠেনি কখনো..কষ্ট গুলিই ভুলতে পারিনি আবার প্রেম..
-- কেন, এ চার বছরে কোন মেয়েকে পছন্দ হয়নি.?
--তেমন কেউ চোখে পড়ে নি আজও..
--গল্প লিখিস এখনো..?
-- নাহ ছেড়ে দিয়েছি..
--কেন..?
-- ভালো লাগে না এসব আর..
-- একটা সময় খুব সাহিত্য চর্চা করতে কলেজ লাইফে মনে আছে..?
--হুম
-- যে কোন মেয়ে তোর সাহিত্যে মুগ্ধ হয়ে যেত, শুধু ভালোবাসার সাহিত্য চর্চার জন্যই ডজনখানেক মেয়ের প্রেমের অফার পেয়েছিলি, তাই না..?
--হুম, কিন্তু এগুলো এখন অতীত
--আসলে তোর প্রেমের সাহিত্যে যে কোন মেয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য..
--( মনে মনে বলছি শুধু তোমাকে মুগ্ধ করতে পারলাম না তানহা)
তানহা এবার চেয়ার থেকে উঠে ড্রয়িং রুমের সোফাতে গিয়ে বসলো, আমাকেও হাত ধরে নিয়ে আসলো। দুজনে একই সোফাতে বসলাম। আমাদের মাঝে চার আংগুলের ফারাক,
তানহা হঠাৎ আমায় বলল--
-- চোখ দুটো বন্ধ করতো..
--মানে, কিছু বুঝলাম না..?
--তোর এত কিছু বোঝার দরকার নেই, তোকে যা বলছি তাই কর..?
--আসলে.....
-- এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি..
ওর রেগে যাওয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কারন আমি জানি ও রাগলে ঘূর্ণিঝড় ছড়িয়ে পড়বে..
এক মিনিট পর তানহা বলল..
-- এবার চোখটা খুলতে পারিস..
চোখ খুলতেই আমি তো একেবারেই সারপ্রাইসড--
চলবে......মামাতো বোন যখন অফিসের বস..♥
পর্ব: ৬+৭
লেখক: মেহমেদ হোসাইন শাকিল(নূর)
এক মিনিট পর তানহা বলল..
-- এবার চোখটা খুলতে পারিস..
চোখ খুলতেই আমি তো একেবারেই সারপ্রাইসড--
একটা বিউটিফুল চকলেট কেক, তার ওপর সুন্দর আমার নাম লেখা। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমার জন্মদিন।
আমি তানহার দিকে তাকাতেই তানহা মুচকি মুচকি হাসছে--
-- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ এগেইন( তানহা)
ওর এই ভালবাসাময় কান্ড দেখে নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো।
-- কিরে তোর চোখে পানি কেন..?
--না আসলে আম্মু চলে যাওয়ার পরে চার বছরে এত সুন্দর করে কেউ আমার জন্মদিন মনে রাখিনি।
--হুম, রাখবে কিভাবে..?
মনে রাখার মত মানুষের কাছ থেকে তো দূরে ছিলি।
-- তাও ঠিক.
-- এবার বেশি কথা না বলে কেক টা কেটে ফেল(আমার হাতে একটা ছুরি দিয়ে)
কেকটা কেটে তানহার মুখে একটু তুলে দিলাম, তানহাও আমাকে একটু খাইয়ে দিল।
-- একটা কথা বলার ছিল..?
-- হ্যাঁ বল.
--আমার যে চকলেট ফ্লেভার পছন্দ আপনি কি করে জানলেন..?
-- সিক্রেট, বলা যাবে না (মুচকি হেসে)
দেখি তোর হাতটা দে তো..?
--কেন??
-- এত প্রশ্ন করিস কেন তুই..?
আমার হাতটা টেনে নিয়ে একটা দামি ঘড়ি পরিয়ে দিল।
-- সব সময় হাতে রাখবি আমার স্মৃতি হিসেবে..
--কেন আপনি কি কোথাও চলে যাচ্ছেন নাকি..?
--আমি আবার কোথায় যাব, তোর তো কোনো কমন সেন্স নেই, যখন তখন নিরুদ্দেশহয়ে যাস তাই বললাম।
এই নে, (আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে)
-- কি আছে এটার ভেতর..?
-- খুলেই দেখ না..
শপিং ব্যাগ টা খুলে দেখি একটা ব্ল্যাক শার্ট যা আমার খুব পছন্দের..
--আমার যে ব্ল্যাক শার্ট পছন্দ আপনি কি করে জানলেন??
-- এটাও সিক্রেট থাক, পরে এক সময় বলব। এবার এটা খেয়ে নে( আমার হাতে একবাটি পায়েস ধরিয়ে দিয়ে)
-- আবার পায়েস..?
--হুম, তোর তো পায়েস খুব পছন্দের তাই না..
--হ্যাঁ, মায়ের হাতের পায়েস খেতে খুব পছন্দ করতাম কিন্তু আমার জন্য এত কষ্ট করারর কি প্রয়োজন ছিল।
-- তুই না একটু বেশি কথা বলিস, আর প্রশ্নটাও বেশি করিস। সবকিছু কি মুখে বলা যায়।
--মানে. বুঝলাম না কিছু..
-- তোর এত বুঝে কাজ নেই। পায়েস টা খেয়ে নে..
আমি পায়েস খাচ্ছি, তানহা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হঠাৎ টেবিলের উপর বাটিটা রেখে দিলাম।।
-- কিরে রেখে দিলি কেন..?
-- খাবার সময় কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না. আমার খুব অস্বস্তি হয়.
--ওলে বাবালে,, এত লজ্জা..? আচ্ছা ঠিক আছে তুই খা আমি কেবিনে যাচ্ছি.
কথাটা বলেই তানহা উঠে চলে গেল আমিও পায়েস টা খেয়ে ওকে বললাম..