কলেজে যাওয়ার জন্য রেড়ি হচ্ছি এমন সময় আম্মু এসে বললো....
আম্মুঃ আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসিস।
আমিঃ কেন?
আম্মুঃ তোকে নিয়ে আমার বান্ধবীর বাসায় যাবো।
আমিঃ তোমার বান্ধবীর বাসায় তুমি যাও। আমি গিয়ে কি করবো.?
আম্মুঃ আরে যাবো তো তোর জন্য। রাবেয়া (আম্মুর বান্ধবী) তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে।
আমিঃ আমার জন্য যাবে মানে?
আম্মুঃ হুম, তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।
আমিঃ তুমি কি পাগল হইছো, মেয়ে দেখবা মানে?
আম্মুঃ হুম, আমি আর রাবেয়া একে অপরকে কথা দিয়েছিলাম, আমাদের ছেলে মেয়েকে একসাথে বিয়ে দিয়ে আমাদের সম্পর্কটা আরো গভীর করবো।
আমিঃ বাহ! নিজেদের জন্য আমাকে কেন বলি দিচ্ছো?
আম্মুঃ তুই ছাড়া আমার আর কোনো ছেলে আছে নাকি? থাকলে তো তাকেই দিতাম।
আমিঃ কিন্তু এটা কেমনে সম্ভব? আমি এখনো তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেট চালাই। বৌকে কি খাওয়াবো?
আম্মুঃ তুই যে কি রোজগার করে খাওয়াবি সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। খাওয়ার চিন্তা তোর করা লাগবে না। কিন্তু....
আমিঃ কিন্তু কি?
আম্মুঃ মেয়ে তোর থেকে ১ বছরের বড়।
আমিঃ কিহ! বড় মানে?
আম্মুঃ হুম বড়।
আমিঃ এই আম্মু তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে? এমনিতে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করছো, এখন আবার বলো মেয়ে আমার থেকে সিনিয়র।
আম্মুঃ তো সমস্যা কি?
আমিঃ সমস্যা কি মানে? আরে ছেলেরা সব সময় তাদের থেকে জুনিয়র মেয়ে বিয়ে করে, এটাই সমাজের নিয়ম।
আম্মুঃ কোনো হাদিসে লেখা আছে যে সিনিয়র মেয়ে বিয়ে করা যাবে না?
আমিঃ দেখো আম্মু এটা পসিবল না। আজকে যদি মেয়ে আমার থেকে ছোট হতো তাহলে বিয়ের কথা চিন্তা করতাম।
আম্মুঃ আরে আমরা তো মনে করছিলাম আমার মেয়ে হবে আর রাবেয়ার ছেলে হবে। কিন্তু উলটো হয়ে গেলো। রাবেয়ার আগে মেয়ে হয়ে গেলো। তারপর তুই জন্ম নিলি। যদি রাবেয়ার ছোট কোনো মেয়ে থাকতো তাহলে তার সাথেই তোর বিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন তো রাবেয়ার একটাই মেয়ে। তাই তোকে তাকেই বিয়ে করতে হবে।
আমিঃ এই আম্মু তুমি মানুষ? নিজের ছেলের সাথে কেউ এমন করে?
আম্মুঃ মেয়েটা অনেক ভালো। দেখতেও মাশাল্লা, তুই একবার তাকিয়ে আর চোখ ফিরাইতে পারবি না। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে.
আমিঃ কিহ! ৩য় বর্ষ মানে???
আম্মুঃ হুম। ৩য় বর্ষে পড়ে।
আমিঃ এই আম্মু তুমি কি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছো? মেয়েটা আমার থেকে ২ ক্লাস সিনিয়র আর বয়সে ১ বছরের সিনিয়র। এটা কেমনে সম্ভব? লোকজন আমাকে কি বলবে?
আম্মুঃ যার যেটা ইচ্ছা সেটা বলুক। তুই আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসবি।
আমিঃ কিন্তু আম্মু.... (পুরোটা না শোনার আগেই চলে গেলো)
ধুর শালা, মেজাজটাই খারাপ করে দিলো। হায়রে বন্ধুরা আমাকে কি বলবে?
বলবে যে আমি একটা বুড়িকে বিয়ে করছি। হায় আল্লাহ উঠায় নাও আমারে।
চলেন কলেজে যেতে যেতে আপনাদের পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমি জুয়েল, আপাতত স্টুডেন্ট। বাকীটা গল্প পড়তে পড়তে জেনে যাবেন।
কলেজে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছি, এমন সময় আসলো ২ হারামি...
আয়মানঃ কিরে ফকিন্নি! একা একা বসে আছিস কেন?
সানিঃ কি মামা চ্যাকা খাইলি নাকি?
আমিঃ এই হারামীর দল, চুপ থাক। এমনিতেই টেনশনে আছি।
আয়মানঃ কেন, কি হইছে?
আমিঃ আম্মু বিয়া ঠিক করছে, বিকালে মেয়ে দেখতে যাবে।
সানিঃ আরে মামা তোর লাক অনেক ভালো, প্রেমটেম ছাড়া ডাইরেক্ট বিয়ে! ট্রিট দিস দোস্ত।
আমিঃ তোর বা* দিমু শালা। মেয়েটা আমার থেকে সিনিয়র।
আয়মানঃ বাহ! সব কিছুতো ভালোই হচ্ছে। তুই তো সিনিয়র মেয়ে বেশি পছন্দ করিস। তোর জন্য ভালো হবে।
আমিঃ আরে হারামখোর সিনিয়র পছন্দ করি ঠিক আছে, তারমানে এই নয় যে সিনিয়র কাওকে বিয়ে করবো।
সানিঃ হালারপুত তামান্না আপুর পিছনে পিছনে ঘুরতি যে ভুলে গেলি? উনি সিনিয়র না.??
আমিঃ ধুর তামান্নার সাথে অন্য কাওকে মিলাবি না। তামান্না হলে তো কথাই ছিলো না।
আয়মানঃ কেন? তামান্নার মধ্যে কি আছে?
আমিঃ চুপ কর শালা, এখন একটা বুদ্ধি দে। কি করে বিয়েটা বন্ধ করা যায়।
সানিঃ মেয়েটা কেমন?
আমিঃ দেখিনি এখনো।
আয়মানঃ আগে দেখে আয়, মেয়েটা দেখ। তোর পছন্দ হলে করিস নাহলে করিস না।
আমিঃ কিন্তু আম্মু তো ওর সাথেই বিয়ে দিবে!
সানিঃ আরে তুই আগে দেখে আয়, সুন্দর হলে আমাকে বলিস। আমি নিজেই করবো, আমারও অনেক ইচ্ছা সিনিয়র কাওকে আদর করা।
আমিঃ এই তুই মানুষ? সালা আমি আছি আমার টেনশনে আর তুই মজা নিচ্ছিস?
সানিঃ মজা না সত্যি। আগে দেখে আয়, বাকীটা পরে দেখা যাবে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দেখি কি করা যায়।
এরপর ৩ জনে মিলে একসাথে ক্লাসে চলে গেলাম। আমি ২ টা ক্লাস করে বাসায় আসলাম।
দেখি আম্মু কার সাথে হেসেহেসে কথা বলছে, আমাকে দেখে বললো....
আম্মুঃ ওই তাড়াতাড়ি কর, তোর হবু শাশুড়ি কল দিয়েছে।
বুঝতে আর দেরি হলো না আম্মু কার সাথে কথা বলছে। এদিকে রাগে আমার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
যাইহোক খাওয়া দাওয়া করে রেড়ি হয়ে একটা CNG করে রাবেয়া আন্টিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
১ ঘন্টা পর একটা বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো, আমি আর আম্মু ভিতরে গেলাম। আম্মুকে দেখে একটা মহিলা এসে জড়িয়ে ধরে মরা কান্না কাঁদতে শুরু করলো, এদিকে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।
মহিলাদের এতো আবেগ কোথায় থেকে আসে কে জানে, এই দেখলাম ভালো, এখন দেখি আবার কান্না করছে। আমাকে তো শালা বোমা মারলেও কান্না আসবে না।
যাইহোক একটু পর রাবেয়া আন্টি আমার দিকে তাকালো, আম্মু ইশারায় আমাকে সালাম দিতে বললো। আমি সালাম দিলাম। আমার কাছে এসে বললো...
আন্টিঃ এই সুফিয়া (আম্মুর নাম) এটা তোর ছেলে নাকি?
আম্মুঃ হুম, তোর হবু জামাই।
আন্টিঃ আল্লাহ কতো বড় হয়ে গেছে। জানো বাবা তোমাকে সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছি। কতো হিসু করছো আমার কোলে তার কোনো হিসাব নাই।
যাহ! কথা বলছি এখানে আর উনি চলেন গেলেন কোথায় হিসু করছি, কোথায় হাগু করছি। হায়রে আল্লাহ উঠায় নাও আমারে।
যাইহোক আমি সোফা রুমে গিয়ে বসলাম, আম্মু আর রাবেয়া আন্টি কথা বলতে বলতে উপরে চলে গেলো।
একটু পর আম্মু নিচে আসলো, এসে আমাকে বললো...
আম্মুঃ এই মুখ এমন করে রাখছিস কেন? একটু হাসিখুশি থাক।
আমিঃ হায়রে আম্মু বুঝলানা তুমি, আমার কান্না আসছে।
আম্মুঃ চুপ কর। একটু পর বৌ আসবে তোর সামনে।
প্রায় ৪৫ মিনিট বসে আছি, মহারানীর আসার কোনো খবর নাই।
অবশেষে আসলো, মহারানীকে দেখেই......
চলবে......
To be continue......
----------------
Hello! How are you? :)
----------------
----------------
#সিনিয়র_বউ
#writer_এম_এইচ_জুয়েল
#part_2
#collected
(১ম পর্বের পর থেকে)
অবশেষে আসলো, মহারানীকে দেখেই আমি তো পুরা টাস্কি খেয়ে গেলাম। আরে এটাতো তামান্না আপু।
যার পিছনে পিছনে আমি এতোদিন ঘুরাঘুরি করেছি। তারমানে তামান্নাই রাবেয়া আন্টির মেয়ে। আহ! তামান্না আমার বউ হবে। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো।
যাইহোক তামান্না একটা শাড়ী পড়ে এসেছে, দেখেই আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আমার এমন হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে আম্মু আমাকে একটা টোকা দিলো, তারপর বাস্তবে ফিরে আসলাম।
তামান্না এসে আমাকে চা দিলো, আমার মনের ভিতর তো তখন লাড্ডু ফুটছে। বিদ্যা বালানের গানটা মনের ভিতর বাজতেছে
"উলালা উলালা তুহি মেরেই ফ্যান্টাসি ""
তামান্না এসে আম্মু সালাম দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আমিও সোফায় বসে রইলাম।
আম্মু অনেকক্ষণ রাবেয়া আন্টির সাথে বসে বসে গল্প করলো। তারপর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে আমি সানি আর আয়মানকে গ্রুপ কল দিলাম....
আমিঃ এই হারামীর দল কোথায় তোরা?
আয়মানঃ কেন কি হইছে?
আমিঃ সেটা পরে বলবো, তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্টে আয়, তোদের ট্রিট দিবো।
ট্রিটের কথা শুনে দুজনেই লেজ উঠিয়ে চলে আসলো। সন্ধ্যায় ওদের সাথে রেস্টুরেন্ট এ গেলাম।
সানিঃ মামা ঘটনা কি হঠাৎ করে ট্রিট!
আমিঃ দোস্ত কাম তো হয়ে গেছে।
আয়মানঃ কি মেয়ে পছন্দ হইছে নাকি?
আমিঃ হুম, ঠিক বলছিস।
সানিঃ তুই না বললি এই বিয়েটা তুই করবি না।
আমিঃ আরে সেটাতো আগে বলেছিলাম। কিন্তু পাত্রিক দেখার পর সব ঠিক হয়ে গেছে।
আয়মানঃ তা পাত্রী টা কে?
আমিঃ তোদের তামান্না আপু!
সানিঃ আমাকে ক্যাম্পাসের তামান্না আপু নাকি? যার জন্য তুই কুত্তার মতো পিছন পিছন হাটতি।
আমিঃ এই সালারপুর চুপ কর, আমি কারো পিছনে ঘুরি নাই। আর হে সেই তামান্নাই আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে।
আয়মানঃ সিরিয়াসলি! দোস্ত এই তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি আসার মতো।
আমিঃ হুম, আজকে যা ইচ্ছা খেয়ে নে। টাকা আমি দিমু।
সানিঃ তো বিয়ে কখন?
আমিঃ আগামী শুক্রবার। কালকে থেকে কেনাকাটা শুরু, তোরা কেউ আর ক্লাসে যাস না এই সপ্তাহ। কাজ আছে,,
এরপর ওদের ট্রিট দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না, ভাবছি তামান্নাকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ প্রেম করবো।
না থাক বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করা যাবে, এই কয়েকদিন একটু পার্ট নিয়ে থাকি।
পরের দিন সবাই মিলে কেনাকাটা শেষ করলাম। আস্তে আস্তে বাসায় মেহমান আসতে শুরু করছে। আম্মু সবাইকে ইনভাইট করে দিছে।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো, সবাই অনেজ ব্যস্ত। আমিও মোটামুটি ব্যস্ত ছিলাম।
অবশেষেঃ বিয়েটা হয়ে গেলো, আমি সানি আর আয়মান ছাদে বসে বসে গল্প করছি। এদিকে তামান্না বাসরঘরে বসে আমার জন্য ওয়েট করছে।
আমার তো আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে না, কিন্তু ২ হারামী আমাকে যেতে দিচ্ছে না।
রাত প্রায় ১২.০০ টা, আমি তখনও ছাদে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় আম্মু আসলো....
আম্মুঃ কিরে তুই এখনো বসে আছিস যে?
আমিঃ তো কি করবো?
আম্মুঃ কি করবি মানে? যা ঘরে যা। মেয়েটা সেই কখন থেকে একা একা বসে আছে।
সানিঃ আন্টি আমরা ও কে অনেক বার বলেছি কিন্তু ও আমাদের কথা শুনছে না। (পুরোটা মিথ্যা)
আমি সানির কথা শুনে ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম, তখন আম্মু বললো...
আম্মুঃ যা তাড়াতাড়ি ঘরে যা।
আমিঃ ঠিক আছে যাচ্ছি। তুমি নিচে যাও।
একটুপর আম্মু চলে গেলো, আমি সানিকে একটা লাথি দিয়ে বললাম....
আমিঃ এই হারামখোর তুই আমাকে অনেক যেতে বলেছিস? শালা তোর জন্য আমি যেতে পারছিনা আর তুই বলছিস আমাকে যেতে বলেছিস।
সানিঃ আরে মামা রাগ করস কেন? আন্টি একটু পাম দিলাম আরকি।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা।
আমিঃ ওকে যা
চ্ছি। দোয়া করিস।
সানিঃ এই শোন,,,
আমিঃ হুম বল।
সানিঃ মনে বিড়াল মারিস, তোর ক্ষমতা দেখিয়ে দিবি। নাহলে পুরুষ জাতি তোরে ধিক্কার দিবে।
আমিঃ চুপ কর, আমি যাচ্ছি।
সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা। যদি বেঁচে থাকিস তাহলে কাল দেখা হবে।
আমি একটা হাসি দিয়ে নিচে চলে আসলাম।