মামাতো বোন অফিসে বসে রোমান্টিক,???

এ্যালার্মের আওয়াজে হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে দেখি ৭টা বেজে গেছে।

বিছানা থেকে উঠে একটু বসলাম, পাশ?

এ্যালার্মের আওয়াজে হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে দেখি ৭টা বেজে গেছে।

 

বিছানা থেকে উঠে একটু বসলাম, পাশে থাকা মায়ের ছবিটা হাতে নিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতেই চোখ থেকে দু-ফোটা পানি ঝড়ে গেল। মায়ের ছবিতে একটা চুমু খেয়ে টেবিলে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ওয়াশরুমে।

 

আজ একটা এন্টারভিউ আছে। এইনিয়ে ৮টা ইন্টারভিই দেয়েছি প্রায় সবগুলোতেই উত্তীর্ন হয়েছি কিন্তু ঘুষ দিতে পারিনি বলে শেষ পর্যন্ত আর চাকরিটা হয়নি।

 

দেখা যাক এইটাতে কি হয়,,?

 

দেরি না করে রেডি হয়ে নিলাম।বের হতে যাবো ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।

দরজা খুলতেই দেখি বাড়িওয়ালার মেয়ে ঐশী নাস্তা হাতে দাড়িয়ে আছে।

 

-ভেতরে আসতে বলবেন না(ঐশী)

-ও সরি, আসুন

-আম্মু আপনার জন্য নাস্তা পাঠিয়েছে(ঐশী)

-কিন্তু আমিতো এখন বেড়োবো, আমার তাড়া আছে।

-কিন্তু নাস্তা করবেন না(ঐশী)

-প্লিজ কিছু মনে করবেন না, অন্য একদিন।

 

কথাটা বলেই বেড়িয়ে আসলাম।

রাস্তায় আসতেই একটি রিক্সা নিয়ে অফিসের সামনে চলে এলাম,

অফিসে ঢুকেই দেখলাম আমার মতো অনেকে বসে আছে।

ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য।আমিও গিয়ে বসে পড়লাম এক কোণে।

 

একে একে সবাই ইন্টারভিউ দিলো, অনেকক্ষণ পর আমার ডাক আসলো।

 

ইন্টারভিউ দিলাম, মোটামুটি ভালো। শেষ করে বাইরে এসে বসলাম। আমার পাশের দুজন লোক বলাবলি করছিলো---

 

-আরে, ইন্টারভিউ ভালো দিই আর খারাপ, ঘুষ ছাড়া কি আর চাকরি হবে,,,?

-ঠিক বলেছেন ভাই,

বর্তমানে ট্যালেন্টের কোনো দামই নেই, সবাই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।

 

তাদের কথা শুনে এই অফিসের এক বয়স্ক পিয়ন বললেন-

 

-শুনো, তোমরা কোথায় কি দেখেছো জানিনা, কিন্তু এই অফিসের যিনি বস, তিনি খুব ভালো মানুষ। প্রতিভা কে গুরুত্ব দেন,,টাকাকে নয়..

 

ওনার কথা শুনে একটু ভালো লাগল। তারপর ঘন্টাখানেক পর ফলাফল ঘোষনা করা হলো।

আমি সহ আরো অনেকে সিলেক্ট হয়েছি।

কাল থেকে জয়েন করতে হবে।

 

তার আগে অফিসের যিনি বস তিনি আমাদের কিছু বলবেন. তাই আমাদের সবাইকে ওনার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।

 

কিন্তু রুমে ডুকতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।

 

এ আমি কাকে দেখছি, তানহা..?

 

ও এখানে কেন,,?

 

আগে যাকে কখনো দেখবো না বলে প্রতিঙ্গা করেছিলাম, আজ আবার তার সামনে দাড়িয়ে আছি।

কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো...? তাহলে ও এখানে কি করছে..?

 

তানহা আমায় দেখে চমকে গিয়ে বললো------

 

--চলবে...

 

মামাতো বোন যখন অফিসের বস..♥

 

পর্বঃ দ্বিতীয়

 

লেখকঃ মেহমেদ হোসাইন শাকিল(নূর)

 

কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো...? তাহলে ও এখানে কি করছে..?

 

তানহা আমায় দেখে চমকে গিয়ে বললো------

-মেহমেদ, তুই এখানে..?

 

সবাই তানহার কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেল। তানহার হুট করে মনে পড়ল ও সবার সামনে কথা বলছে।

 

এরপর ও নিজেকে কন্ট্রোল করে কড়া বসের মতো সবাইকে কিছু কড়া উপদেশ দিতে লাগল।

 

আর আমি শুধু ওর মুখের দিকে চেয়েছিলাম।

সে কি চাহনি ওর, বিধাতা যেন ওর মধ্যে একটি আলাদা রূপ দিয়ে দিয়েছে।

চোখ ফেরানোই দায়.

 

সেই আগের মতো কথা বলার স্টাইল, পারসোনালিটি সব মিলিয়ে এক অনন্য তানহা, এক আলাদা মায়া ওর চেহারায়।

ওর মুখশ্রী যেন না ভোলার মত।

 

হয়তো এই কারনেই এক সময় ওর প্রেমে পড়েছিলাম আমি।

কিন্তু আজ সবই অতীত।

ভাগ্যের বিবর্তনে ও আজ আমার অফিসের বস। আর আমি ওর সামান্য কর্মচারী মাত্র।

 

জীবনটা বড়ই অদ্ভদ।

 

তানহা তার উপদেশ শেষ করে সবাইকে লিভ নিতে বলল। ওর দিকে শেষ বারের মত তাকিয়ে আমি সবার সাথে যখনই চলে আসব তখনই তানহা পিছন থেকে বলল--

-মেহমেদ সাহেব,

আপনি একটু থাকুন।

-(আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম)

 

সবাই চলে যাওয়ার পর, তানহা তার চেয়ার থেকে দৌড়ে উঠে চলে আসলো আমার সামনে।

এসেই একটি মায়াময় হাসি দিলো।

কত বছর পর আবার ওর হাসিমাখা মুখটা দেখতে পেলাম।

 

তারপর অভিমানের সুরে একটানা অনেকগুলা প্রশ্ন করল--

--মেহমেদ, তুই এখানে.? কেমন আছিস তুই..? এত বছর কোথায় ছিলি ?

ইসস, চেহারাটার কি হাল করে রেখেছিস,, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, নিজের প্রতি একটুও যত্ন নিস না, তাইনা??

তোর কি এই ৪ বছরে আমাদের কথা একটিবারের জন্যও মনে পড়েনি..?

এতটা স্বার্থপর কিভাবে হলি তুই..?

তুই জানিস, তুই নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার পর নানু তোর জন্য কত কেঁদেছে,,?

আব্বু, চাচ্চু, জেঠুরা তোকে কত খুজেছে,,?

কোথাও তোকে পাওয়া পায়নি।

ফুফু চলে যাওয়ার পর তুই যে এমন একটা কাজ করবি কে জানত বল,,?

কিরে কিছু বল?

ও কথাগুলো বলতে বলতে হাপিয়ে গেছে।

-আপনি কেমন আছেন?

-তুই আমাকে আপনি করে বলছিস কেন?

-সবসময়তো তাই বলতাম,জানেন না?

-হুম জানি,কিন্তু একটা সময় তুই করেই বলতি,হঠাৎ করে একদিন আপনি করে ডাকা শুরু করলি,জিঞ্জেস করেছিলাম কেন, কোনো উত্তর দিস নি।

-কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো

-কেন?

-ম্যাম আমি এখন আসি,কথাটা বলেই চলে আসব আর তানহা আমার হাতটা ধরে ফেলল....

 

চলবে---

 

.মামাতো বোন যখন অফিসের বস♥

 

৩য় পর্ব

লেখক: মেহমেদ হোসাইন শাকিল

 

ম্যাম আমি এখন আসি,কথাটা বলেই চলে আসব আর তানহা আমার হাতটা ধরে ফেলল....

 

--তুই বারবার আমাকে ম্যাম বলে ডাকছিস কেন...?

--অফিসের বসকে ম্যাম কিংবা স্যার বলেই ডাকতে হয়। তাইতো জানতাম..(অভিমানী কন্ঠে)

--তোর আমার সম্পর্কটা কি শুধুই বস এবং কর্মচারীরর...?

 

ওর মুখে এই কথাটা শুনে বেশ অবাকই হলাম। কেন জানি মনে হলো, ও আমার খুব আপন হওয়ার চেষ্টা করছে।

 

--এর বাইরে আমি তো কোনো রিলেশন দেখছি না ম্যাম,, (হাতটা ছাড়িয়ে)

--কেন,,? আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কি তোর কাছে শেষ হয়ে গেছে মেহমেদ..?

--আমার কাছে আমার পৃথিবী ছিল আমার আম্মু। আম্মু যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, সেদিন আমি আমার পৃথিবী হারিয়েছি। যার পৃথিবী বলতে কিছু নেই, তার আবার সম্পর্ক, বন্ধুত্ব..?(মাথা নিচু করে)

--আমরা নাহয় তোর কেউ নই,,কিন্তু দাদী..? সেও কি তোর কাছে পর হয়ে গেছে..?

--তা কেন হবে..কেমন আছে নানু..?

--চার বছরে তোর একবারও মনে পড়েনি এই কথা যে তোর নানু কেমন আছে,,?

--পড়বে না কেন..? অনেক বার নানুকে মিস করেছি। হয়তো একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কষ্ট পেয়েছে অনেক। কিন্তু তার পাশে তো আপনারা আছেন, মামারা আছে।

--হ্যা তা ঠিক হয়তো। কিন্তু তুই..?তোর কি কোনো রিসপ্সেবেলেটি ছিল না দাদীর প্রতি..?জানিস, এই চার বছরে দাদু তোর জন্য কত কেদেছে?কিন্তু তুইতো পুরো নিরুদ্দেশ.. কোনো খোজ নেই তোর??

-- আমি আমার আম্মুকে হারিয়েছি। সেই পরিস্থিতিতে নিজেকেই সামলাতে পারিনি, অন্যকে কিভাবে সামলাবো..?

--কিন্ত....

--ম্যাম... আমি অনেক ক্লান্ত, আজ আসি..(ওকে থামিয়ে দিয়ে)

--কোথায় যাচ্ছিস, দাদীর সাথে দেখা করবি না..?

--অন্য একদিন, আজ আসি।

 

কথাটা বলেই চলে আসার সময় ওর দিকে একবার ফিরে তাকালাম।

 

তানহা মলিন দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়েছিল, যেন কিছু বলতে চায়..ওর দিকে তাকালে যেন ওর মায়ায় পড়া আবশ্যক।

 

এতটাই মায়াবী মেয়েটা।

 

আমি নিজেকে সামলে ওর রুম থেকে চলে আসলাম।

বেড়িয়েই দেখি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জাবেদ বলে একজন আমাকে প্রশ্ন করে বসল--

-কি ভাই, পুরোনো রিলেশন নাকি..?

আরেকজন বলে উঠল-

-কি বলল ভাই এতক্ষণ ম্যাম আপনাকে? আসতে না আসতেই প্রমোশন হয়ে গেছে মনে হয়..?

 

কথাগুলো শুনে একটা বিরক্তিকর লুক নিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা সবাই চুপ হয়ে যায়।

 

তারপর ওদের পাশ কাটিয়ে আমি অফিস থেকে বেড়িয়ে আসলাম।আজ সারাদিন অফিসেই চলে গেছে। একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।ততক্ষণে রাত ৯টা বাজে।

 

রুমে ডুকেই ফ্রেশ হয়ে বিছানায় একটু বসলাম। চোখের সামনে বারবার তানহার চেহারাটা ভেসে উঠছে।

 

আম্মুকেও বড্ড মিস করছি আজ-মনে পড়তেই টেবিল থেকে ডায়রিটা নিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে লিখতে লাগলাম--

 

আম্মু, কেমন আছো তুমি.? আমাকে কি তোমার মনে পড়ে ? তোমার মেহমেদ কে ছাড়া তুমি কিভাবে আছো আম্মু?আমি তো তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই।

 

জানো আম্মু, আমি না প্রায় সময়ই রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু তোমার মতো করে কেউ বকা দিয়ে আমায় খাইয়ে দেয় না।

 

ঘরটা আগের মতই অগোছালো করে রাখি। কেউ তোমার মত বকবক করে আমার ঘরটা আর গুছিয়ে দেয় না।

 

সকাল হলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে কেউ আর বলে না,,"মেহমেদ, উঠ বাবা। সকাল ১০টা বাজলো তো, আর কত ঘুমাবি",,।

 

কেউ সকালের নাস্তাটা আর জোর করে খাইয়ে দেয় না। আমার পছন্দের খাবারগুলো আর কেউ বানিয়ে দেয় না।

আমার জন্মদিনে কেউ আর পায়েস বানিয়ে দেয় না আম্মু।তোমার মত করে কেউ আর যত্ন নেয়।

 

তোমায় বড্ড মিস করি আম্মু।

আমার জীবনে সবচেয়ে বড় শূন্যতা তৈরি করে তুমি কোথায় চলে গেলে আম্মু..? তুমি এতোটা সেলফিস কিকরে হতে পারলে আম্মু..?

 

জানো আম্মু, আমি না প্রতিটা রাতে কাদি, তোমার জন্য। বালিশটা ভিজে যায় আমার চেখের পানিতে।

 

কেন এমন করলে আম্মু..?কেন ছেড়ে চলে গেলে আমায়..?তুমি একটিবারও ভাবলে না, তোমায় ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো, কিভাবে বাচবো। কে করবে


Jwel Rana

36 Blog posts

Comments