তারপর অভিমানের সুরে একটানা অনেকগুলা প্রশ্ন করল--
--মেহমেদ, তুই এখানে.? কেমন আছিস তুই..? এত বছর কোথায় ছিলি ?
ইসস, চেহারাটার কি হাল করে রেখেছিস,, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, নিজের প্রতি একটুও যত্ন নিস না, তাইনা??
তোর কি এই ৪ বছরে আমাদের কথা একটিবারের জন্যও মনে পড়েনি..?
এতটা স্বার্থপর কিভাবে হলি তুই..?
তুই জানিস, তুই নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার পর নানু তোর জন্য কত কেঁদেছে,,?
আব্বু, চাচ্চু, জেঠুরা তোকে কত খুজেছে,,?
কোথাও তোকে পাওয়া পায়নি।
ফুফু চলে যাওয়ার পর তুই যে এমন একটা কাজ করবি কে জানত বল,,?
কিরে কিছু বল?
ও কথাগুলো বলতে বলতে হাপিয়ে গেছে।
-আপনি কেমন আছেন?
-তুই আমাকে আপনি করে বলছিস কেন?
-সবসময়তো তাই বলতাম,জানেন না?
-হুম জানি,কিন্তু একটা সময় তুই করেই বলতি,হঠাৎ করে একদিন আপনি করে ডাকা শুরু করলি,জিঞ্জেস করেছিলাম কেন, কোনো উত্তর দিস নি।
-কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো
-কেন?
-ম্যাম আমি এখন আসি,কথাটা বলেই চলে আসব আর তানহা আমার হাতটা ধরে ফেলল....
চলবে---
.মামাতো বোন যখন অফিসের বস♥
৩য় পর্ব
লেখক: মেহমেদ হোসাইন শাকিল
ম্যাম আমি এখন আসি,কথাটা বলেই চলে আসব আর তানহা আমার হাতটা ধরে ফেলল....
--তুই বারবার আমাকে ম্যাম বলে ডাকছিস কেন...?
--অফিসের বসকে ম্যাম কিংবা স্যার বলেই ডাকতে হয়। তাইতো জানতাম..(অভিমানী কন্ঠে)
--তোর আমার সম্পর্কটা কি শুধুই বস এবং কর্মচারীরর...?
ওর মুখে এই কথাটা শুনে বেশ অবাকই হলাম। কেন জানি মনে হলো, ও আমার খুব আপন হওয়ার চেষ্টা করছে।
--এর বাইরে আমি তো কোনো রিলেশন দেখছি না ম্যাম,, (হাতটা ছাড়িয়ে)
--কেন,,? আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কি তোর কাছে শেষ হয়ে গেছে মেহমেদ..?
--আমার কাছে আমার পৃথিবী ছিল আমার আম্মু। আম্মু যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, সেদিন আমি আমার পৃথিবী হারিয়েছি। যার পৃথিবী বলতে কিছু নেই, তার আবার সম্পর্ক, বন্ধুত্ব..?(মাথা নিচু করে)
--আমরা নাহয় তোর কেউ নই,,কিন্তু দাদী..? সেও কি তোর কাছে পর হয়ে গেছে..?
--তা কেন হবে..কেমন আছে নানু..?
--চার বছরে তোর একবারও মনে পড়েনি এই কথা যে তোর নানু কেমন আছে,,?
--পড়বে না কেন..? অনেক বার নানুকে মিস করেছি। হয়তো একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কষ্ট পেয়েছে অনেক। কিন্তু তার পাশে তো আপনারা আছেন, মামারা আছে।
--হ্যা তা ঠিক হয়তো। কিন্তু তুই..?তোর কি কোনো রিসপ্সেবেলেটি ছিল না দাদীর প্রতি..?জানিস, এই চার বছরে দাদু তোর জন্য কত কেদেছে?কিন্তু তুইতো পুরো নিরুদ্দেশ.. কোনো খোজ নেই তোর??
-- আমি আমার আম্মুকে হারিয়েছি। সেই পরিস্থিতিতে নিজেকেই সামলাতে পারিনি, অন্যকে কিভাবে সামলাবো..?
--কিন্ত....
--ম্যাম... আমি অনেক ক্লান্ত, আজ আসি..(ওকে থামিয়ে দিয়ে)
--কোথায় যাচ্ছিস, দাদীর সাথে দেখা করবি না..?
--অন্য একদিন, আজ আসি।
কথাটা বলেই চলে আসার সময় ওর দিকে একবার ফিরে তাকালাম।
তানহা মলিন দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়েছিল, যেন কিছু বলতে চায়..ওর দিকে তাকালে যেন ওর মায়ায় পড়া আবশ্যক।
এতটাই মায়াবী মেয়েটা।
আমি নিজেকে সামলে ওর রুম থেকে চলে আসলাম।
বেড়িয়েই দেখি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জাবেদ বলে একজন আমাকে প্রশ্ন করে বসল--
-কি ভাই, পুরোনো রিলেশন নাকি..?
আরেকজন বলে উঠল-
-কি বলল ভাই এতক্ষণ ম্যাম আপনাকে? আসতে না আসতেই প্রমোশন হয়ে গেছে মনে হয়..?
কথাগুলো শুনে একটা বিরক্তিকর লুক নিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা সবাই চুপ হয়ে যায়।
তারপর ওদের পাশ কাটিয়ে আমি অফিস থেকে বেড়িয়ে আসলাম।আজ সারাদিন অফিসেই চলে গেছে। একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।ততক্ষণে রাত ৯টা বাজে।
রুমে ডুকেই ফ্রেশ হয়ে বিছানায় একটু বসলাম। চোখের সামনে বারবার তানহার চেহারাটা ভেসে উঠছে।
আম্মুকেও বড্ড মিস করছি আজ-মনে পড়তেই টেবিল থেকে ডায়রিটা নিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে লিখতে লাগলাম--
আম্মু, কেমন আছো তুমি.? আমাকে কি তোমার মনে পড়ে ? তোমার মেহমেদ কে ছাড়া তুমি কিভাবে আছো আম্মু?আমি তো তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই।
জানো আম্মু, আমি না প্রায় সময়ই রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু তোমার মতো করে কেউ বকা দিয়ে আমায় খাইয়ে দেয় না।
ঘরটা আগের মতই অগোছালো করে রাখি। কেউ তোমার মত বকবক করে আমার ঘরটা আর গুছিয়ে দেয় না।
সকাল হলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে কেউ আর বলে না,,"মেহমেদ, উঠ বাবা। সকাল ১০টা