বয়ফ্রেন্ড কে খুশী করার জন্য মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে ওর সাথে রিলেশনশীপ স্টেটাস দিয়ে আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিবো কিন্তু নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।আমার আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলেই অনলাইনে না আসলে মনের মধ্যে কেমন আনচান করে।
তাই অভ্যাস অনুযায়ী ঘুম থেকে জেগে, পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে নেট কানেক্ট করতেই মেসেঞ্জারে ঝড় উঠে গেলো। আমি এতোক্ষন একচোখ খুলে ফোন দেখছিলাম কিন্তু পরপর মেসেঞ্জারে টুংটাং আওয়াজ শুনে বাধ্য হয়ে আরেক চোখ ও খুলতে হলো।
আমার হাফ নষ্ট ফোনটা মেসেঞ্জারের এই ধকল সহ্য করতে পারলো না বেচারা জ্ঞান হারালো। আমি কোনো রকমে ফোনটার জ্ঞান ফিরিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখলাম আসলে কাহিনী টা কি আর এমন করে আমাকে কে স্মরণ করছে?।।
ওমা অচেনা কয়েকজন মেয়ে দেখি আমাকে অনবরত টেক্সট করেই চলেছে আর সেই যে রিলেশনশীপ স্টেটাস দিয়েছিলাম সেখানে তো কমেন্টের কারখানা। আমি একে একে সব চেক করতে শুরু করলাম।
আমার ফ্রেন্ডলিস্টে কিছু মানুষ আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুভকামনা করেছে আবার কিছু মানুষ দুঃখ ও পেয়েছে। এসব দেখে আমার বেশ ভালোলাগলো। যারা দুঃখ পেয়েছে তাদের মনের অবস্থার কথা ভেবে আমার ঠোঁ*টের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। মনটা ফুরফুরে লাগছে। কিন্তু সেই হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কিছু মেয়ের কমেন্ট দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। একজন লিখেছে,
> ওই মেয়ে তুই আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশনশীপ স্টেটাস দিলি কেনো? তোর সাহস তো কম না।
আরেক জন্য লিখেছে,
> আমাদের ভালোবাসা অটুট থাকবে আজীবন। তোমার মতো ফালতু মেয়ের এই সামান্য অ"পকর্মে আমাদের প্রেম ভা*ঙবে না।
বলে কি আমি নাকি ফা*লতু? মন খা"রাপ নিয়ে আরেক জনের লেখা পড়লাম। লিখেছে
> তুই কে রে আমাদের সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করছিস? সামনে পেলে না তোর নাক কে*টে নিবো বে*হায়া মেয়ে একটা।
লে হালুয়া,নাকে হাত দিয়ে আমি টাস্কি খেয়ে গেলাম।এরা বলে কি?। এদিকে মেসেঞ্জারের ঝড় এখনো চলছে আমি ওদিকে পরে যাবো ভেবেছিলাম কিন্তু এখন আর অপেক্ষা করা যাবে না তাই তাড়াতাড়ি মেসেজ চেক করতে শুরু করলাম।
দুইটা মেয়ে টেক্সট করেই চলেছে। আমি একজনের মেসেজ সিন করলাম। অনেক কিছুই লিখেছে আমি এতো আর পড়তে পারলাম না। ভাবলাম আগে পরিচিত হয়ে নেই।
> হাই আপু,আপনি কে ?
আপনি কে বলতেই মেয়েটা আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওর একটা পিক পাঠিয়ে দিলো। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটার পায়ের উপর মাথা দিয়ে ও শুয়ে আছে পার্কের মধ্যে ঘাসের উপর। এটা দেখে আমার চোখটা জ্বলে উঠলো। এই হলো বে"ডার শুক্রবারের অফিসে যাওয়ার কাহিনী । মেয়েটা পিক দিয়ে টেক্সট করেছে
> এটা আমি আর আমার হবু বরের পিক। আমাদের সামনের মাসে বিয়ে আর তুমি ওর সাথে রিলেশনশীপ স্টেটাস দাও কোনা সাহসে? ওর থেকে দূরে থাকবা।
> জ্বী আচ্ছা। আসলে আপু আপনাকে আমার ও কিছু দেখানোর ছিল একটু অপেক্ষা করেন আপনার একটা জিনিস দেখাচ্ছি।
আমি ও কম যায় না। ছেকা যখন খাব তখন একা খাবো কেনো সবাই মিলেমিশেই খাই। কথাটা ভেবে আমি অন্য মেয়েটার মেসেজ আর ওর দেওয়া পিক টা এই মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম আর বললাম,
>বয়ফ্রেন্ড তোর একার নারে বইন অনেকের সম্পত্তি সে।
আমি ওদের সুবিধার জন্য সবাইকে নিয়ে একটা চ্যাটিং গ্রুপ খুলে নিয়ে বললাম
> বইন সকল তোরা এবার প্রমাণ কর এই বে"ডা আসলে কার বয়ফ্রেন্ড। আমার না এটা আমি নিশ্চিত। তোরা যেনো এই লু"চ্চা বে"ড়ারে আমার ভাগে ফেলিস না। এতো ট্যালেন্টেড জিনিস আমি সামলাতে পারবো না। তোরা ভাগ করে নে, না পারিস দান করে দিস তবুও আমাকে আর এর মধ্যে টানিস না।
কথাটা বলে আমি লিভ নিয়ে রিলেশনশীপ স্টেটাস টা তুলে সিঙ্গেল করে দিলাম। হঠাৎ দেখি বে"ডা আমার নাম্বারে ফোন দিছে আমি ওকে কিছু না বুঝতে দিয়ে ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে মিষ্টি করে বলে উঠল,
> হাই রুকাইয়া বেবী কেমন আছো? আমার এমবি শেষ তাই অনলাইনে যাওয়া হয়নি তুমি রাগ করোনা বেবী।
> আরে রাগ কেনো করবো? তাড়াতাড়ি এমবি কিনে অনলাইনে আসো অপেক্ষা করছি তো।
> আচ্ছা বেবী, ভালোবাসি অনেক অনেক।
ইচ্ছা করছিল বেডার মাথাটা ফাটিয়ে দেই কিন্তু দিলাম না। ওকে এই মেয়ে গুলোই ফাটাবে।ওর পিকচার গুলো ওরা গার্লস গ্রুপে দিয়ে বলে দিবে এই বেডা লুচ্চা, সবাই সাবধান।।
বেডার প্রেম করার শখ জন্মের মতো মিটে যাবে। আমি তাড়াতাড়ি ওকে ব্লক করে মেসেজ আর নাম্বার ডিলিট করে দিলাম। বেডারে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু এখন ঘৃণা হচ্ছে।
তবুও মনকে সান্ত্বনা দিলাম। ভাবলাম এটা একটা অভিজ্ঞতা জীবনের চলার পথে কাজে দিবে। মানুষের মিষ্টি মিষ্টি কথায় গলে গিয়ে ভুল করা উচিৎ না। আমারও জন্মের শিক্ষা হলো আর যায় করি অনলাইনে আর প্রেম না।