চারদিকে শত্রু

ট্রানটর… অরাজক সময়ের মাঝামাঝি, ট্র্যানটর ছিল রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা। বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের

এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

 

.

 

জনবহুল গ্রহের রাজধানী শহরের পেসপোর্টের ব্যস্ততার সাথে তুলনা করার মতো কিছু নেই, কখনো ছিলও না। প্রকাণ্ড মেশিনগুলো নির্দিষ্ট স্থানে অলসভাবে বিশ্রাম নিচ্ছে। স্পেসশিপের দ্রুত আগমন-নির্গমন যেন বিশাল ইস্পাতের সমুদ্রে ছোট ছোট ঢেউ। যান আগমন-নির্গমনের পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে প্রায় নিঃশব্দে।

 

পোর্টের পঁচানব্বই ভাগ স্কয়ার মাইল এলাকা ব্যবহার করা হয় প্রকাণ্ড মেশিন এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রকদের জন্য। মাত্র পাঁচ ভাগ স্কয়ার মাইল এলাকা ব্যবহৃত হয় বিশাল জনসমুদ্রের জন্য যারা এই পোর্টকে গ্যালাক্সির সকল নক্ষত্রে পৌঁছানোর স্টেশন হিসাবে ব্যবহার করে।

 

যদি কোনো যান কখনো গাইডিং বিম অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয় এবং প্রত্যাশিত ল্যাণ্ডিংয়ের স্থান থেকে আধামাইল দূরে বিশাল বিশ্রাম কক্ষের ছাদের উপর ক্র্যাশ করে–তা হলে কয়েক হাজার মানুষকে চিহ্নিত করার জন্য শুধু পাতলা অর্গানিক ধোয়া এবং ফসফেটের কিছু গুড়ো পড়ে থাকবে। যাই হোক সেফটি ডিভাইস ব্যবহারের কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি।

 

বিশাল জনসমুদ্রের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা কোথাও যাচ্ছে, তারা সারি বেঁধে এগোচ্ছে; বাবা মায়েরা বাচ্চাদের শক্ত করে ধরে রেখেছেন; মালপত্রগুলো দক্ষভাবে সামলানো হচ্ছে।

 

আর্কেডিয়া ডেরিল, ধার-করা পোশাক পরে অপরিচিত পৃথিবীর অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। পোশাকের মতো তার জীবনটাও ধার-করা মনে হচ্ছে। এই গ্রহের বিশাল উন্মুক্ততা তার কাছে মনে হচ্ছে বিপজ্জনক। তার এখন প্রয়োজন একটা বদ্ধ জায়গার অনেক দূরে মহাবিশ্বের অপরিচিত কোনো প্রান্তে–যেখানে এখনো মানুষের পা পড়েনি।

 

সে দাঁড়িয়ে আছে, বয়স চৌদ্দর কিছু বেশি, কিন্তু আশি বছরের বৃদ্ধার মতো উদ্বিগ্ন, পাঁচ বছরের শিশুর মতো ভীত।

 

শত শত অপরিচিত লোক তাকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা সবাই কী। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার? তাকে ধ্বংস করবে, কারণ সে জানে কোথায় রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।

 

বজ্রপাতের মতো একটা কণ্ঠস্বর তার চিৎকারটাকে গলার ভেতরেই জমিয়ে দিল।

 

‘দেখ, মিস,’ অধৈর্য স্বরে পিছনের যাত্রী বলল, ‘তুমি কী টিকেট মেশিন ব্যবহার করছ না শুধু দাঁড়িয়ে আছ?’

 

হঠাৎ করেই আর্কেডিয়া উপলব্ধি করল সে অনেকক্ষণ ধরে টিকেট মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ক্লিপারে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে নিচে গন্তব্যস্থান চিহ্নিত বাটনটিতে চাপ দিলে মেশিনই টিকেট এবং বাকি পয়সা ফেরত দেবে। খুব সহজ কাজ। পাঁচ মিনিট ধরে কারো দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।

 

ক্লিপারে দুশ-ক্রেডিটের একটা বিল দেওয়ার পর হঠাৎ করেই ট্র্যানটর’ লেখা বাটনটি তার চোখে পড়ল। ট্রানটর, মৃত এম্পায়ারের মৃত রাজধানী–যে-গ্রহে সে জন্মেছে। স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো সে বাটনটি টিপে দিল। কিছুই ঘটল না, শুধু একটা লেখা জ্বলজ্বল করছে ১৭২.১৮-১৭২.১৮-১৭২.১৮

 

এই পরিমাণ বিল কম হয়েছে। দুশ-ক্রেডিটের আরেকটা বিল দিল সে। মেশিন টিকেট বের করে দিল, তারপরই খুচরো বিল।

 

টিকেট নিয়েই সে দৌড় দিল, পিছনে তাকাল না।

 

কিন্তু কোথায় যাবে। চারদিকেই শত্রু।

 

একই সাথে দুই দিকে লক্ষ্য করতে করতে হাঁটছিল বলে সে লোকটাকে খেয়াল করেনি। লোকটার নরম পেটে তার মাথা ডুবে গেল। কেঁপে উঠল ভয়ে। একটা হাত তার বাহুদুটো আঁকড়ে ধরায় বেপরোয়াভাবে ছোটার চেষ্টা করল সে। পারল না।

 

লোকটা তাকে নরমভাবে ধরে রেখেছে। ধীরে ধীরে তার দৃষ্টি স্বচ্ছ হলে সে লোকটাকে দেখতে পেল। বেটে এবং মোটা। মাথায় ঘন সাদা চুল, ব্যাকব্রাশ করার ফলে তার লাল গোলাকার মুখে একটা বেমানান আভিজাত্য তৈরি হয়েছে।

 

‘কী ব্যাপার?’ শেষ পর্যন্ত কথা বলল, অকপট কৌতূহল নিয়ে, ‘তুমি ভয়। পেয়েছ।‘

 

‘দুঃখিত,’ ফিসফিস করে বলল আর্কেডিয়া। ‘আমাকে যেতে হবে। মাফ করবেন।‘

 

লোকটা তার কথা পুরোপুরি উপেক্ষা করে বলল, ‘তোমার টিকেট পড়ে যাবে,’ তারপর আর্কেডিয়ার দুর্বল আঙুল থেকে টিকেটটা নিয়ে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির সাথে সেটা দেখল।

 

‘যা ভেবেছিলাম, তারপর চিৎকার করে উঠল ষাঁড়ের মতো ‘মমাহ্!’

 

এক মহিলা দ্রুত তার পাশে এসে দাঁড়াল, আরো বেটে এবং আরো গোলগাল।

 

‘পপা,’ তিরস্কারের ভঙ্গিতে বলল মহিলা, ভিড়ের মাঝে তুমি চিৎকার করছ কেন? লোকজন তোমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন তুমি পাগল। এটা কী তোমার নিজের খামার?

 

নীরব আর্কেডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওর ব্যবহার ভালুকের মতো,’ তারপর আরও ধারালো ভাবে বলল, ‘পপা, মেয়েটাকে যেতে দাও। কী করছ তুমি?’

 

কিন্তু পপা শুধু তার সামনে টিকেট দোলাল, ‘দেখ,’ সে বলল, ‘এই মেয়ে ট্র্যানটরে যাবে।‘

 

মমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ‘তুমি ট্রানটর থেকে এসেছ? ওর হাত ছেড়ে দাও পপা, আমি বলছি।’ হাতের ভারি বোঝা একপাশে নামিয়ে রেখে জোড় করে আর্কেডিয়াকে বসিয়ে দিল। বসো,’ সে বলল, ‘নিজের পা দুটোকে বিশ্রাম দাও। এক ঘণ্টার আগে কোনো শিপ নেই, আর বসার জায়গাগুলো সব লোফারদের দখলে। তুমি ট্র্যানটর থেকে এসেছ?’

 

আর্কেডিয়া গভীর শ্বাস নিল। শুষ্ক কণ্ঠে বলল, ‘আমার জন্ম হয়েছে সেখানে।‘

 

খুশিতে হাততালি দিল মমা, আমরা এখানে এসেছি একমাস, কিন্তু নিজের গ্রহের কারো সাথে দেখা হয়নি। খুব ভাল লাগছে। তোমার বাবা-মা’–সে অনিশ্চিতভাবে এদিক সেদিক তাকাল।

 

‘আমি বাবা-মার সাথে আসিনি,’ আর্কেডিয়া বলল, সতর্কভাবে।

 

‘একা? তোমার মতো ছোট একটা মেয়ে?’ রাগ এবং সহানুভূতির সাথে বলল মমা, ‘সেটা কী করে সম্ভব?’

 

‘মমা,’ তার জামার হাত ধরে টান দিল পপা, ‘আমাকে বলতে দাও। কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে। আমার মনে হয় এই মেয়ে ভয় পেয়েছে।‘ যদিও সে ফিসফিস করে বলছে কিন্তু আর্কেডিয়া শুনতে পারল। ‘দৌড়াচ্ছিল–আমি তার দিকে লক্ষ্য রাখছিলাম এবং কোথায় যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল না করেই সে দৌড়াচ্ছিল। সরে দাঁড়াবার আগেই আমার সাথে ধাক্কা খায়। তার পরের ঘটনা তুমি জান। আমার মনে হয় সে সমস্যায় পড়েছে।‘

 

‘তুমি মুখ বন্ধ রাখো, পপা। যে কেউ ধাক্কা খেতে পারে। সে তার জিনিসপত্রের পোটলার উপর বসে পড়ল, পোটলাটা ফেটে পড়ার উপক্রম হলো অতিরিক্ত চাপে, একটা হাত আর্কেডিয়ার কাঁধের উপর ফেলে রেখেছে। তুমি কার ভয়ে পালাচ্ছ, সুইট হার্ট? আমাকে বলতে ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে সাহায্য করব।’

 

মহিলার ধূসর স্নেহার্ড চোখের দিকে তাকাল আর্কেডিয়া, তার ঠোঁট কাঁপছে। বুদ্ধির এক অংশ বলছে যে এরা দুজন ট্রানটরের বাসিন্দা। তাকে সাহায্য করতে পারে, এর পরে কী করবে বা কোথায় যাবে সেটা ঠিক করার আগ পর্যন্ত তাকে আশ্রয় দিতে পারে। আরেক অংশ বেশ জোরালোভাবেই বলছে- যে তার মা বেঁচে নেই,


Rx Munna

447 Blog des postes

commentaires