চৌদ্দ জুলাই, বৃহস্পতিবার
আমার সকাল দুপুর বিকেল নিঃশব্দে কেটে যায়। চোখদুটো দেয়ালে। মাঝে মাঝে শুধু এ পাশ থেকে ওপাশ ফিরেছি। ওপাশ থেকে মাঝে মাঝে এপাশে। সীমান্তর দিকে এক বোরখা পরা মেয়ে দৌড়ে যাচ্ছে, পেছন থেকে রাইফেল আর গজারি কাঠের লাঠি আর বড় বড় পাথর হাতে নিয়ে দৌড়ে আসছে এক দঙ্গল লোক। বোরখাওয়ালী বেশিদূর দৌড়োতে পারেনি, তার আগেই ধরা পড়ে গেল। ধরা পড়ার পর তাকে সবাই মিলে নগ্ন করে ধর্ষণ করে গলাটি কেটে নিয়ে চলে গেল, শরীরটি পড়ে রইল জঙ্গলে, কাদায়। আমি শিউরে উঠতে থাকি। কিছুতেই দৃশ্যটি আমি দূর করতে পারি না।
ঝ আজ একটি অন্যরকম খবর শোনালেন। আজ নাকি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন বেরিয়েছে খবরের কাগজগুলোয়। আজকের কাগজ নিউজ এণ্ড ফিচার সার্ভিসএর প্রতিবেদনটি ছেপেছে। দেশের প্রধান দুটি দলের উদাসিনতার কারণে বাংলাদেশে মৌলবাদী তৎপরতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন বিএনপি এবং প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ মৌলবাদীদের ব্যাপারে নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে মৌলবাদীরা বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা শুরু করেছে। বাংলাদেশের সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এখন সংকট চলছে। এই সংকটের মূল কারণ হল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে সংবিধান সংশোধন করে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করতে হবে। অন্যদিকে সরকারি দল এই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই দাবিতে বিরোধী দলগুলো সংসদ অধিবেশন বর্জন করছে। প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের দল জাতীয় পার্টি এবং মৌলবাদীদের সংগঠন জামাতে ইসলামি। রাজনৈতিক এই সংকটের সুযোগে দেশের মৌলবাদী এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠী আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে ফতোয়া জারি করে উন্নয়ন তৎপরতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। কয়েকটি পত্রিকা এদের বিরুদ্ধাচরণ করায় মৌলবাদীরা পত্রিকা অফিসে হামলা করেছে। কিন্তু সরকার এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। একজন স্বনামধন্য লেখিকার বিরুদ্ধে মৌলবাদীরা মিছিল সমাবেশ করলে সরকার ঐ লেখিকার বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করে। এর ফলে মৌলবাদীরা আরও উৎসাহী হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের জন্য মৌলবাদীদের চটাতে নারাজ। গত নির্বাচনের পর মৌলবাদীদের প্রধান সংগঠন জামাতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন দেয়, ফলে বিএনপি সরকার গঠন করে। এখন আওয়ামী লীগ মনে করছে, মৌলবাদীদের হাতে রাখলে নির্বাচনে তাদের লাভ হবে। ফলে মৌলবাদ বিরোধী কোনও কর্মসূচী আওয়ামী লীগ এখন গ্রহণ করছে না বরং জামাতের সঙ্গে সংসদে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, মৌলবাদীদের বিপক্ষে তাদের প্রকাশ্য অবস্থান অটুট রেখেছে। কিন্তু বাস্তবে এর পক্ষে তেমন কোনও কর্মসূচী নেই। মৌলবাদী গোষ্ঠী এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট। ফলে দেশে আরেকটি সহিংসতা এবং বড় ধরনের গোলযোগ অত্যাসন্ন হয়ে উঠেছে। দেশের উন্নয়ন তৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
–এটুকু পড়ে ঝ শুয়ে পড়লেন। সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটি টান দিয়ে বললেন, কি মনে হচ্ছে তোমার?
ঝর বাড়িয়ে দেওয়া সিগারেটে একটি টান দিয়ে একটি বালিশ পিঠের পেছনে নিয়ে হেলান দিয়ে বলি— আমেরিকার অনেক কিছু আমি পছন্দ করি না। বিশেষ করে ওদের পররাষ্ট্র নীতি। কম্যুনিস্ট খতম করার জন্য হেন কুকাজ নেই যে করেনি। লাতিন আমেরিকার কতগুলো দেশে কি জঘন্য হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ভিয়েতনামের নিরীহ মানুষকে কয়েক বছর ধরে খুন করল। একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে। কিন্তু…
—কিন্তু কি? ঝর চোখে প্রশ্ন।
—বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে এখন যা বলল, তা কিন্তু হানড্রেড পারসেন্ট ঠিক। মুসলমান মৌলবাদীদের তারা একসময় পছন্দই করত, কারণ কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে এদের ভাল লেলিয়ে দেওয়া যায় বলে। এখন আর কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কিছু নেই, তাই বোধহয় মৌলবাদীদের পালা পোষার